পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বসে থাকতে হয় না, ডাপ্তি অতি অনায়াসে এবং ঠিক সময়েই মেলে।’ তুমি তোমার নবীন দৃষ্টি নিয়ে নতুন নতুন দৃশ্য দেখচ তোমার সেই আনন্দ আমি মনে মনে অনুভব করচি। আমি আমার এই খোলা ছাদে লম্বা কেদারায় শুয়ে শুয়ে গিরিতটে তোমার দেবদারুবনে ভ্রমণের সুখ মনে মনে সঞ্চয় করি। আমিও প্রায় তোমার বয়সেই হিমালয়ে গিয়েছিলুম— ডালহৌসীতে বক্রোটা শিখরের উপরে থাকতুম— এক একদিন, আমাদের বাড়ির খানিক নীচে এক দেবদারুবনে সকালে একলা বেড়াতে যেতুম। আমি ছিলুম ছোট্ট— (তখন লম্বায় ছ ফুট ছিলুম না) তাই গাছগুলোকে এত প্রকাণ্ড বড় মনে হত সে আর কি বলব। সেই সব গাছের সুদীর্ঘ ছায়ার মধ্যে নিজেকে দৈত্যলোকের অতি ক্ষুদ্র এক অতিথি বলে মনে হত। কিন্তু সেই আমার ছেলেবেলাকার পবর্বত, ছেলেবেলাকার বন এখন আর পাব কোথায় ? এখন আমার মনটা এই জগতের পথে এত নিজের সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে চলে, যে নিজের চলার ধূলোয় এবং নিজের রথের ছায়ায় জগৎটাকে বারো আনা ঢাকা পড়ে যায়— বাজে ভাবনার ঝাকের মধ্যে দিয়ে জগৎটা আর তেমন করে দেখা যায় না। তাই আজ তুমি যে-পাহাড়ের মধ্যে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্চ, মনে হচ্চে সে আমার সেই অল্পবয়সের পৃথিবীর পাহাড়-– আমার সেই ৪৫ ৷৷ ৪৬ বৎসরের আগেকার আমি তোমার মনের মধ্যে দিয়ে তোমার চোখ নিয়ে সেই সেকালের গিরিঅরণ্যে আর একবার ঘুরে বেড়াচ্চে। আমরা পুরোণো হয়ে উঠে নিজের হাজার রকম চিন্তায় এই পৃথিবীটাকে যতই জীর্ণ করে দিই না কেন, মানুষ আবার ছেলেমানুষ হয়ে নূতন হয়ে চিরনূতন পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে। শুধু একদল মানুষ যদি চিরকালই বৃদ্ধ হতে হতে পৃথিবীতে বাস করত তাহলে বিধাতার এই পৃথিবী তাদের নস্যে, তামাকের ধোঁয়ায় তাদের পাকা বুদ্ধির আওতায় একেবারে আচ্ছন্ন হয়ে যেত, স্বয়ং বিধাতা তার নিজের সৃষ্ট এই পৃথিবীকে চিনতে পারতেন না। কিন্তু জগতে শিশুর ধারা কেবলি আসচে নবীন brዓለ