পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আজ বুধবার। আজ মন্দিরে ছুটির ঠাকুরের কথা বলেচি। যখন আমরা কাজ করতে থাকি তখন শক্তির সমুদ্র থেকে আমাদের মধ্যে জোয়ার আসে— তখন আমরা মনে করি এ শক্তি আমারই এবং এই শক্তির জোরেই আমরা বিশ্ব জয় করব। কিন্তু শক্তিকে বরাবর খাটাতে ত পারি নে— সন্ধ্যা যখন আসে তখন ত কাজ বন্ধ হয়, তখন ত আর গাণ্ডীব তুলতে পারি নে। তাই জীবনে জোয়ার ভাটার ছন্দকে মেনে চলা চাই। একবার আমি, একবার তুমি। সেই তুমিকে বাদ দিয়ে যখন মনে করি আমিই কৰ্ত্তা— তখনই জগতে মারামারি বেধে যায়— রক্তে ধরণী পঙ্কিল হয়ে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে তুমিকে মানলেই শান্তি। মা তার মেয়েকে ডেকে বলেন, সংসারের কাজে তুমি আমার সঙ্গে লেগে যাও। মেয়ে তখন কোমর বেঁধে লাগে। কিন্তু সে যখন ভুলে যায় যে, এ কাজ তার মায়ের সংসারেরই কাজ, যখন অহঙ্কার করে ভাবে আমি যেমন ইচ্ছা তাই করব, তখন সে সংসারের ব্যবস্থাকে উলট পালট করে জঞ্জাল জমিয়ে তোলে— অবশেষে এমন হয় যে মা বাটা হাতে নিয়ে সমস্ত আবর্জনা ঝেটিয়ে ফেলেন। মেয়ের সেই কাজটুকুর উপরে ঝাটা পড়ে না যে-কাজ মায়ের সংসারব্যবস্থার সঙ্গে মেলে। সংসারস্থিতির সঙ্গে এই যে মিলিয়ে কাজ করা এতে আমাদের যথেষ্ট স্বাধীনতা আছে— অর্থাৎ মিল রেখেও আমরা তার মধ্যে নিজের স্বাতন্ত্র রাখতে পারি— তাতেই সৃষ্টির বৈচিত্র্য— মেয়ের হাতের কাজটুকু মায়ের অভিপ্রায়কে প্রকাশ করেও নিজেকে বিশিষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারে যখন তাই সে করে তখন তার সেই সৃষ্টি মায়ের সৃষ্টির সঙ্গে মিলে স্থিতি লাভ করে। বিশ্বকৰ্ম্মার কাজে আমরা যখন যোগ দিই তখন যে পরিমাণে তার সঙ্গে মিল রেখে ছন্দ রেখে চলি সেই পরিমাণে আমাদের কাজ অক্ষয়কীৰ্ত্তি হয়ে ওঠে— যে পরিমাণে বাধা দিই সেই পরিমাণে আমরা প্রলয়কে ডেকে আনি। নিজের জীবনকে এই প্রলয় থেকে যদি বাঁচাতে চাই— তাহলে প্রতিদিনই আমি তুমির ছন্দ মিলিয়ে চলতে ৯ O