পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তখন কষ্ঠে আমাদের আওয়াজ যতই চড়তে থাকবে মনে মনে রাণুও হাসবে ভানুও হাসবে কি বল ? হাসাটা আমার স্বভাব— যার সঙ্গে আমার হাসি চলে না তার সঙ্গে আমার কোনো ব্যবহার চলাই শক্ত। যমরাজ যখন সম্বদ্ধনা করে নিয়ে যাবার জন্যে দূত পাঠাবেন তখনো যেন তার সঙ্গে হেসে নিতে পারি। যিনি আমার আকাশের মিতা তিনিও কম হাসেন না— কিন্তু এক এক সময় তার হাসি বড় প্রখর হয়ে ওঠে— মানুষের সদি গৰ্ম্মি লাগে। আমার যখন বয়স অল্প ছিল তখন মাঝে মাঝে আমার হাসিও কম প্রখর হয়ে উঠত না— সেই খর দাহনের ইতিহাস তখনকার কাগজপত্র ঘাটলে খুঁজে পাবে। কিন্তু এখন আমার সে দিন গেছে। তুমি যে ভানুটিকে পেয়েচ সে সন্ধ্যাবেলাকার ভানু— তার হাসি রঙিন কিন্তু উগ্র নয়, তার হাসি ভূতলকে স্নিগ্ধ চুম্বন করে আনন্দিত— তাকে দিগন্তের বনজঙ্গল আড়াল করে ফেলে, তাদের ডালপালার খোচা দিয়ে তার ললাটে আঁচড় কাটতে চায়— কিন্তু সে ক্ষমা করে বিদায় নিতে চায়— আপনার শাস্তির মধ্যে আপনি প্রচ্ছন্ন হওয়াই তার কামনা। একটা কথা তোমার চিঠির মধ্যে লিখেচ সেটা আমার কাছে খুব মজার ল শুন । তুমি লিখেচ যখন তুমি আমাকে প্রথম চিঠি লিখেছিলে— যখন তুমি আমাকে চক্ষেও দেখ নি এবং আবিষ্কার কর নি যে আমার বয়স সাতাশ তখনো তুমি আমাকে ভালবাসতে। কেমন করে হল ? বোধহয় পূৰ্ব্বজন্মে যে সব চিঠি লিখতে সে চিঠিটা তারই অনুবৃত্তি— তাই একদম লিখে দিয়েছিলে, প্রিয় রবিবাবু, কিছুই ভাবতে হয় নি। এক জন্মের সঙ্গে আর এক জন্ম দৈবাৎ এক এক সময় ঠিক জোড়া লেগে যায়— তখন এক পরিচ্ছেদের সঙ্গে আর এক পরিচ্ছেদের মিলে যেতে আর বিলম্ব হয় না। আমি হয়ত বা আমার সাতাশ বছর বয়সটালে সেইখান থেকেই সঙ্গে করে নিয়ে এসেচি— কিন্তু সে কথাটা একেবারেই ভুলে গিয়েছিলুম। আমার কুষ্ঠিটা আমার মাথা ॐ ९