পাতা:চিঠিপত্র (একাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সেই এক এক হাওয়ার কলগর্জন এক একটা পুথিগত নাম পায়— সেই নামের বন্ধনে দল বাধা হয়। সভ্যতা জিনিষটাই জনতা, এই জন্তে সভ্যদেশে এইরকম উপসর্গ সর্বদা দেখতে পাই । আমি যখন জন্মেছিলুম তখন এদেশে নবসভ্যতার ভিড় জমে নি। তাই চারদিকে সারি সারি পুথির বেড়া ছিলনা। মানুষের বেষ্টন নিষ্ঠুর করে আমাকে ঘিরেছিল— প্রহরীরা ছিল যাকে বলে প্রিমিটিভ, আদিম জাতীয়, আমার সব নিরক্ষর শাসনকর্তা। সেই বেষ্টনের ফঁাকে ফঁাকে দেখা দিত পুকুরের জলে বটের ছায়া, আর পাতিহাসের সাতার কাটা— দক্ষিণ পাড়িতে খাড়া ছিল সারি সারি নারকেল গাছ— নীল আকাশের নিচে কী নিবিড় সঙ্গ পেয়েছিলুম কাউকে বোঝাতে পারব না। অত্যন্ত খুশি হয়েছিলুম— কিন্তু সেই খুশি হওয়া সম্বন্ধে যুগধর্মের কোনো বিশেষ বিধান ছিলনা— হয় তো সাইকোএনালিসিসের কোনো এক কোঠায় তার কোনো বিশেষ এক আখ্যা ছিল, সনাতন কিম্বা আধুনিক, কিন্তু সে কথা স্মরণ করিয়ে দেবার জন্যে কোনো পুথিপ্রবীণ ছিল না আমার কানের কাছে। পুথির কারখানাঘরে সর্বদা যেখানে ছাঁচ তৈরি হচ্চে, ছাঁচ বদল হচ্চে, মাপকাঠি হাতে সাহিত্যিক ইনস্পেক্টর নোটবই পকেটে ঘুরে বেড়াচ্চে সে দেশ ছিল বহুদূরে, দিগন্তের পরপারে। সেই জন্যে ভাষা বানিয়েছি আপন মন দিয়ে, ছন্দ বানিয়েছি যা খুশি তাই। মানুষকে ভালোবেসেছি মর্মান্তিক তীব্রতার সঙ্গে । সেই সংবেগ ঠেলা দিয়েছে পালের হাওয়ার