পাতা:চিঠিপত্র (চতুর্দশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অথচ তীক্ষ কণ্ঠস্বর শুনে ও সুন্দর চেহারা দেখে একটু আকৃষ্ট হলাম। র্তার বক্তৃতার পর সমস্ত শ্রোতা এক বাক্যে চীৎকার করতে লাগলেন— “রবিবাবুর গান, রবিবাবুর গান।” আমি তখন পাড়াগেয়ে ছেলে, છે চীৎকারের কোনো মর্মই হৃদয়ঙ্গম করতে পারলাম না। শোকসভার গাম্ভীর্ধহানির আশঙ্কায় রবীন্দ্রনাথ কিছুতেই গান গাইলেম না। আমিও রবিবাবুর বিশেষ কোনো পরিচয় না পেয়েই বাড়ী ফিরে এলাম। তার পর দ্বিতীয় দিন রবিবাবুকে দেখলাম আমি যখন ফাষ্ট আর্টস পড়ি, ১৮৯৬ সালে, ইউনিভারসিটি ইনষ্টিটিউটু হলে ; সকল কলেজের আবৃত্তি-প্রতিযোগিতার সভায় তিনি অন্যতম বিচারক ছিলেন, অপর দুজন বিচারক ছিলেন কবিবর নবীনচন্দ্র সেন ও হীরেন্দ্রনাথ দত্ত মহাশয় । সেদিনও সকল শ্রোতা ও দর্শকের সভার কার্যশেষে চীৎকার জুড়ে দিলেন, “রবিবাবুর গান, রবিবাবুর গান !” রবিবাবু অনুরোধ অস্বীকার ক’রে লজ্জাম্বিত মুখে কেবলই ধীরে ধীরে মাথা নাড়ছেন, আর জনতার চীৎকারও চলছে। অামি জনতার অভদ্রতা দেখে বিরক্ত হ’য়ে উঠেছিলাম, একজন ভদ্রলোক কিছুতেই গান গাইবেন না, তবু তাকে গাইতে পীড়াপীড়ি করা আমার কাছে অত্যন্ত বেয়াদবী ব’লে মনে হলো। আর মনে হলো যে এমনই বা কি গান যে শোনবার জন্য এমন কাঙ্গ লামি করতে হবে । অামি বিরক্ত হ’য়ে সভাত্যাগ ক’রে বেরিয়ে চলে যাচ্ছিলাম, দ্বারের কাছে গিয়ে পৌছেছি, হঠাৎ আমার কানে অশ্রুতপূর্ব মধুর কণ্ঠের স্বরমূৰ্ছন ভেসে এসে প্রবেশ করল, আমি অকস্মাং অপ্রত্যাশিত এক অতীন্দ্রিয় রাজ্যে নীত হ’য়ে চট্‌ ক’রে ফিরে দাড়িয়ে দেখলাম রবিবাৰু গান গাইতে আরম্ভ করেছেন। আমি সভায় সামনের দিকেই বসেছিলাম, কিন্তু উঠে চ'লে আসার পর আমার সম্মুখে অগ্রসর হবার পথ রুদ্ধ হ’য়ে গিয়েছিল, আমি জনতার বৃহ ভেদ ক’রে ভিতরে প্রবেশ করতে না পেরে সেই দ্বারপ্রাস্তে দাড়িয়েই মন্ত্রমুগ্ধ স্তম্ভিতের মতন গান শুনতে লাগলাম। সে যেন মচুন্য কণ্ঠের স্বর নয়, যেমন মধুর তেমনি তীক্ষ স্পষ্ট, আর গানের >> o