পাতা:চিঠিপত্র (চতুর্দশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্রনাথ এমনি বিনয়ী যে ‘প্রবাসী’র জন্য কোনো লেখা আমার হাতে দিয়ে বা চিঠিতে পাঠিয়ে আমাকে বলতেন—দেখো ‘প্রবাসী’তে চলবে কি না। আমি বাংলা বানান সম্বন্ধে অনেক চিন্তা ক’রে বানান সংস্কার করবার চেষ্টা করেছি। আমার সব চেয়ে বড় পুরস্কার যে আমি রবীন্দ্রনাথকে আমার মতাবলম্বী করতে পেরেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে তোমার এক 'মতো ছাড়া সব বানান আমি মেনে নিলাম, তবে যদি মুনীতি চাটুজ্জেও তোমাকে সমর্থন করেন তবে অগত্যা আমাকে সেটাও মেনে নিতে হবে । তিনি কলকাতা ইউনিভার্সিটিতে তিনটি বক্তৃতা করেন এবং সেগুলি পরে বঙ্গবাণী’তে প্রকাশিত হয় । তিনি এই সময় চীনদেশে যাবেন ব’লে বড় ব্যস্ত ছিলেন। তিনি শ্ৰীমান স্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে ব’লে দিলেন যে প্রফ চারুকে দিয়ে দেখিয়ে নিলে আমি নিশ্চিস্ত হয়ে বিদেশে যেতে পারব। প্রথম প্রবন্ধের প্রফ যেদিন আমার কাছে এলো তার পর দিন কবি চীনে যাবেন । আমি রাত্রে তাড়াতাড়ি প্রাফ দেখে সকালেই কবিকে একবার দেখিয়ে নেব বলে তার বাড়ীতে গেলাম। প্রফের মধ্যে আকৃতি শব্দটা আকৃতি হ’য়ে থেকে গিয়েছিল, আমি সংশোধন করিনি। কবি আমাকে বললেন—“চারু, তোমার দেখা প্রফে ভুল থেকে গেল কেমন ক’রে !" এই তিরস্কারও আমার কাছে পরম পুরস্কার বলে মনে হলো । চীন থেকে যেদিন ফিরে এলেন, সেদিন আমিও ষ্টিমার-ঘাটে তাকে অভ্যর্থনা করতে গিয়েছিলাম। আমি তখন কঠিন পীড়াগ্রস্ত, একরকম চলচ্ছক্তিহীন । কবিগুরু ডাঙায় নেমেই আমাকে দেখে সক্ষেহে আমার পিঠে হাত রেখে আমাকে বললেন– “চারু, তোমার একি দশা হয়েছে ! প্রতিপক্ষত্রমা ইব!” সেই স্নেহ স্পর্শ আজও আমার অঙ্গের ভূষণ হ’য়ে রয়েছে। २२23