পাতা:চিঠিপত্র (চতুর্দশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অস্পষ্ট ও লালসাপূর্ণ রচনার বিরুদ্ধে যুক্তি খণ্ডন করতে অপারগ হয়েও তার মতানুকূলে এলেন না দেখে, আর কেবল লোকেন পালিত নন, রবিবাবুর প্রতিভার যেরকম দুর্দম্য প্রতাপ তাতে নিশ্চয়ই এসব দেশে অধিকাংশ নবীন লেখকের লেখায় সংক্রামিত হয়ে পড়বে। এই আশঙ্কায় তারই পরামর্শে লিখিতাকারে কাগজে ছাপতে সংকল্পিত হলেন তার বক্তব্য, এবং ক্রমে ক্রমে ‘কাব্যের অভিব্যক্তি’ (প্রবাসী, কার্তিক ১৩১৩), ‘কাব্যের উপভোগ (বঙ্গদর্শন, মাঘ ১৩১৪) ও ‘কাবো নীতি (সাহিত্য, জ্যৈষ্ঠ ১৩১৬) এই তিনটি প্রবন্ধ প্রকাশ করলেন । ‘কাব্যের অভিব্যক্তি’র প্রত্যক্ষ ইন্ধন অস্পষ্ট কাব্যের সমর্থনে অজিতকুমার চক্রবর্তীর লেখা ‘কাব্যের প্রকাশ’ (বঙ্গদর্শন, শ্রাবণ ১৩১৩) প্রবন্ধ। অজিতকুমার লিখেছিলেন কাব্য অস্পষ্ট হয় আইডিয়া বা ভাববিষয়ের বৃহত্ত্বের ফলে, দ্বিজেন্দ্রলালের মতে, "সেটা বৃহৎ আইডিয়ার ফল নহে, অস্পষ্ট আইডিয়ার ফল। আমাদের দেশের অস্পষ্ট কবিদের অগ্রণী রবীন্দ্রনাথ এবং তার শীর্ষস্থানীয় কবিতা ‘সোনার তরী’ অবলম্বন করে দ্বিজেন্দ্রলাল দেখান ‘অস্পষ্টতা একটা দোষ, গুণ নহে। কাব্যের উপভোগের সম্পৃক্ত রূপে পিঠোপিঠি বঙ্গদর্শনে ছাপা হয়েছিল ‘রবীন্দ্রবাবুর বক্তব্য। বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথ লেখেন, তার রচনায় অহংকার বা অস্পষ্টতাজনিত বিকৃতি যদি লক্ষিত হইয়া থাকে দ্বিজেন্দ্রবাবু তাহার শাস্তি দিতে বিন্দুমাত্র আলস্য করেন নাই। আর দ্বিজেন্দ্রলাল তার প্রবন্ধে প্রবুদ্ধ উপভোগজনিত সমালোচনায় এদেশে নিতান্ত অভাবের কথা উল্লেখ করে লেখেন বঙ্গ সাহিত্যের মঙ্গল হিসেবেই তিনি অস্পষ্টতার প্রতিবাদ করতে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। তদুপরি ‘রবীন্দ্রবাবুর জনকতক নগণ্য চেলা তার উত্তমগুলি অনুকরণে অসমর্থ হয়ে তার অর্থহীন কবিতাগুলোর অন্ধ অনুকরণে ভাবহীন ঝঙ্কার কৰ্ত্তেন। তাই আমার উক্ত প্রবন্ধটি লেখার প্রয়োজন হয়েছিল। ‘কাব্যে নীতি’তেও তার লক্ষ্য সেই অনুকারীদল। ১ পূর্ব গ্রন্থ পৃ ৪১৪-৪১৬।