পাতা:চিঠিপত্র (দশম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ফরিদপুর
শ্রীযুক্ত তারাকুমার রায়ের বাসা
৯ই মাঘ, ১৩০৬।

শ্রদ্ধাভাজনেষু

 আপনার নব কাব্যখানি কল্য পাইয়া সাগ্রহে আদ্যন্ত পড়িয়াছি; এই সুন্দর উপহার প্রাপ্তির সঙ্গে আমার বর্ত্তমান শোচনীয় অবস্থা স্মরণ করিয়া কণিকার “উদারচরিতানাম্” কবিতার “সূর্য্য উঠি বলে তারে, ভাল আছ ভাই” প্রভৃতি ছত্র মনে পড়িল।

 “কথা” কাব্যের মধ্যে যে নৈতিক মাধুর্য্য আছে, তাহাতে কবির কাব্যকলার শ্রেষ্ঠ পরিণতি প্রদর্শিত হইয়াছে। কোশল রাজের শত্রু শিবিরে মহান আত্মসমর্পণ, একটি পূজার প্রদীপের ন্যায় শ্রীমতী দাসীর বৌদ্ধস্তূপ মূলে জীবন নির্ব্বাণ, বিগত সৌন্দর্য্য অনাথিনীর গৃহে উপগুপ্তের অপরূপ প্রতিশ্রুতি পালন, প্রজা দুঃখকাতর রাজার অভিনব প্রণালীর দণ্ড দ্বারা মহিষীকে দুঃখীর দুঃখ বুঝাইবার চেষ্টা, ভক্ত কবীরের পাপী রমণী ও তাহার চক্রান্তজনিত লোক-নিগ্রহকে প্রকৃত মাহাত্ম্য দ্বারা পরাজয় করা প্রভৃতি ভাবের সমস্ত গল্পই নৈতিক জগতের সুন্দর ও অদ্ভুত কথা। নির্ঘুম স্বার্থান্ধ সংসারে এই সন্দর্ভগুলি আরব্য উপন্যাসের গল্পের ন্যায় আশ্চর্য্য, অথচ উহা বাস্তব জগতেরই কথা, কল্পনা নহে; গল্পগুলির অনুষ্ঠান জীবন্ত মাহাত্ম্য মনুষ্যত্বের প্রকৃত সম্মান রক্ষা করিতেছে। অনেকগুলি গল্পই কাঁদিতে কাঁদিতে পড়িতে হইয়াছে, এই অশ্রুতে ক্ষণেকের তরে যেন মনের সমস্ত গ্লানি মুছিয়া গিয়াছে ও কামনাহীন সততার সৌন্দর্য্যে আত্মহারা হইয়া পড়িয়াছি। আমার দুঃখ-ক্লিষ্ট জীবনে এরূপ সুখপ্রাপ্তি বড় বিরল। বৌদ্ধ ও বৈষ্ণব উপাখ্যানগুলি প্রাচীন ভাষায় নানারূপ অলৌকিক ঘটনা ও আবর্জ্জনায় জড়িত ও তাহা সাধারণ পাঠকের

৫৫