পাতা:চিঠিপত্র (দশম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ফরিদপুর
তারাকুমার রায়ের বাসা
২৯শে মার্চ, ১৯০০

পরম শ্রদ্ধাস্পদেষু

 কাহিনী’ সাগ্রহে আদ্যন্ত পাঠ করিয়াছি; “কুন্তী-সংবাদ” ও “নরকবাস” দুইটি কবিতা করুণার প্রস্রবণ, উহাদের মর্ম্মান্তিক ছন্দ মনকে একান্ত দ্রব করিয়া ফেলে, এত অশ্রু উপহার আমি জীবনে অল্প কাব্যের উদ্দেশেই দিয়াছি। ‘গান্ধারীর আবেদনে’ দুর্য্যোধনের চিন্তাশীল দর্পকথায় রাজনীতির বিশ্লেষণ-কৌশল উৎকৃষ্টরূপে প্রদর্শিত হইয়াছে; কবি এই কবিতায় রাজদ্রোহ নিবারক বিধি প্রভৃতি বর্ত্তমান প্রসঙ্গের প্রতি আভাসে কটাক্ষ করিয়া মহাভারতীয় বীর চরিত্রের স্বরূপ বজায় রাখিয়াছেন এবং গান্ধারী চরিত্রে মাতৃস্নেহের ঊর্দ্ধে রমণী হৃদয়ের উদারতা প্রদর্শন করিয়া উহা মহামহিমান্বিত করিয়া তুলিয়াছেন।

 লক্ষ্মীর পরীক্ষা’ আমি ইতিপূর্ব্বেই অনেকবার পড়িয়াছিলাম। উহা অনেকদিন যাবৎ আমার ক্লান্তিকর অবসরের সঙ্গী, ইহাতে রাণী কল্যাণীর চরিত্রের নৈতিক মাধুরীতে মন পবিত্র হইয়া যায়; যাঁহারা ভগবতী, লক্ষ্মী, সরস্বতী মূর্ত্তির অধিষ্ঠান করিয়াছিলেন সেই পৌরাণিক হিন্দুগণও দয়ার এমন একখানি মানসী মূর্ত্তি কল্পনা করিতে পারেন নাই। ক্ষুদ্র কবিতাব্যাপী এক অনুপম শুভ্ররহস্যের অভ্রালোকে এই দেব প্রতিমা অতিশয় উজ্জ্বল হইয়া উঠিয়াছেন; সরলতাময়ী কল্যাণী কুটিলতাকে কুৎসিত প্রতিপন্ন করিয়া, অভিসন্ধিকে ঔদার্য্যগুণে ব্যর্থ করিয়া নিন্দা ও যশঃ উভয়কে নির্ম্মল দেব হাস্যে উপেক্ষা করিয়া পৃথিবীর কল্যাণ ব্রত অব্যাহত রাখিয়াছেন। যে দাতার গৃহ বিচার-আলয়ের ন্যায় সঙ্কীর্ণ, “ফাঁকি দিয়া তারা

৫৭