পাতা:চিঠিপত্র (দশম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নির্দ্দেশ করিয়া “মিথ্যা যদি মধুর রূপে, আসত কাছে চুপে চুপে, তাহা হ’লে কাহার হত ক্ষতি। স্বপ্ন যদি ধরত সে মুরতি।” বলিয়া কল্পনার সৌন্দর্য্য অঙ্গীকার করিয়াছেন, পুষ্প পল্লব শোভিত, আলোক চূর্ণ বিক্ষেপে উজ্জ্বল বনের সৌন্দর্য্য সম্যক রূপে উপলব্ধি করিয়া যৌবনের জন্য বানপ্রস্থের ব্যবস্থা করিয়াছেন, কবি কলঙ্ক ও নিন্দাপঙ্কে তিলক টানিয়া হাসিতে হাসিতে প্রেমের গীতি গাহিয়াছেন, গীতিগুলির সর্ব্বত্রই উচ্ছৃঙ্খলতা ও সৌন্দর্য্য। এই অসংযতবাক্ অথচ সুন্দর কবিকে সামাজিকগণ কি বলিবেন? ইহার রমণীয়তা প্রতিরোধ করিবার উপায় নাই। ইনি হাসিয়া গাহিয়া চিত্ত অধিকার করিবেন, ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগণের প্রাচীন পুঁথি ছিঁড়িয়া তাঁহাদের টিকি ধরিয়া টানা হেঁচড়া করিবেন, ইহাকে কে কি বলিবে? ইনি অতৃপ্তির চক্ষু তৃপ্তির ফুলশার দ্বারা বিঁধাইয়া শিক্ষা দিয়াছেন অতীত ও ভবিষ্যত হইতে বর্ত্তমানই শ্রেষ্ঠ। এই মুহূর্ত্তের শ্রেষ্ঠত্বের বিজ্ঞাপনী লইয়া ক্ষণিকা আমাদের নিকট আসিয়াছে। কিন্তু ঈষৎ বিদ্রূপাত্মক, প্রকৃত সৌন্দর্য্যের প্রতি কটাক্ষক্ষেপী আপাতচপল কবি মধ্যে মধ্যে যে সুগভীর রাগিণী জাগাইয়াছেন, তাহা ক্ষণিকায় ক্ষণ স্বপ্নকে গূঢ় তত্ত্বসমাবেশে মহান করিয়া তুলিয়াছে। “অন্তরতম” শীর্ষক কবিতার গুরুত্ব অনেক বিপুলকায় কাব্যও বহন করে না।

 আমার শরীর অসুস্থ। লিখিতে অত্যন্ত কষ্ট হয়। হৃদয়ের আনন্দ কিছুই ব্যক্ত করিতে সক্ষম হইলাম না।

 “বঙ্গভাষা ও সাহিত্যে”র পুনর্মুদ্রণের জন্য, কলিকাতা আসিয়াছি। আশা করি মহাশয় কুশলে আছেন,— আমার সকৃতজ্ঞ শ্রদ্ধা গ্রহণ করিবেন।

বিনীত নিবেদক
শ্রীদীনেশচন্দ্র সেন

৬০