পাতা:চিঠিপত্র (দ্বাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিশ্বাসে নিশ্বাসে সমীরিত । সৃষ্টির এই ধাবমান শক্তির মধ্যেই মৃত্যুকেও গণ্য করা হয়েচে । অর্থাৎ মৃত্যু প্রতি মুহুর্তেই প্রাণকে অগ্রসর করে দিচ্চে—মৃত্যু ও প্রাণ এই দুইয়ে মিলে তবে জীবন । এই মৃত্যুকে প্রাণের থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিভক্ত করে দেখলে, মিথ্যার বিভীষিক আমাদের ভয় দেখাতে থাকে। এই মৃত্যু আর প্রাণের বিশ্বব্যাপী বিরাট ছন্দের মধ্যে আমাদের সকলের অস্তিত্ব বিধৃত হয়ে লীলায়িত হচ্চে; এই ছন্দের যতিকে ছন্দ থেকে পৃথক করে দেখলেই তাকে শূন্ত করে দেখা হয়, দুইকে অভেদ করে দেখলেই তবেই ছন্দকে পূর্ণ করে পাওয়া যায় । প্রিয়জনের মৃত্যুতেই এই যতিকে ছন্দের অঙ্গ বলে দেখা সহজ হয়—কেননা, আমাদের প্রীতির ধনের বিনাশ স্বীকার করা আমাদের পক্ষে দুঃসাধ্য। এই জন্তে শ্রাদ্ধের দিন হচ্চে শ্রদ্ধার দিন, এই কথা বলবার দিন যে, মৃত্যুব মধ্যে আমরা প্রাণকেই শ্রদ্ধা করি । আমাদের প্রেমের ধন স্নেহের ধন যারা চলে যায়, তার সেই শ্রদ্ধাকে জাগিয়ে দিক, তারা আমাদের জীবনগৃহের যে দরজা খুলে দিয়ে যায়, তার মধ্য দিয়ে আমরা শূন্তকে যেন না দেখি, অসীম পূর্ণকেই যেন দেখতে পাই । আমাদের সেই যে অসত্য দৃষ্টি, যা জীবন-মৃত্যুকে ভাগ করে ভয়কে জাগিয়ে তোলে, তার হাত থেকে সত্যস্বরূপ আমাদের রক্ষা করুন, মৃত্যুর ভিতর দিয়ে তিনি আমাদের অমৃতে নিয়ে যান। শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ●Wン8