পাতা:চিঠিপত্র (নবম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভিড়ের কৈফিয়ৎই যথেষ্ট নয়, বস্তুত আমার দেহ এখন কৰ্ম্মবিমুখ হয়ে উঠেছে, সামান্য কৰ্ত্তব্যকেও গুরুভার বলে মনে হয়। সম্পূর্ণ ছুটির জন্যে মন উৎসুক হয়ে আছে। আমি চতুরাশ্রমে জীবনের ভাগকে বিশ্বাস করি— আমার বানপ্রস্থ্যের বয়স হয়েচে– কিন্তু এ যুগে তার ব্যবস্থা নেই। ঘরের মধ্যেই যথাসম্ভব বানপ্রস্থ্য রচনা করতে হয় । আমার বানপ্রস্থ্য দায়িত্ববিহীন অকাজের মধ্যে — যে কাজে কোনো কৈফিয়ৎ নেই— যাতে বিশ্বের বা নিজের হিতও হবে না অহিতও হবে না— যাতে হৃৎপিণ্ডেও ধাক্কা লাগে না, মস্তিষ্কেও আলোড়ন চলে না— অর্থাৎ যা প্রাচীন বয়সের শৈশবতা । সাহিত্যে একটা খ্যাতি পেয়েছি তার কাছে আমার দায় আছে, সে দায় বাচিয়ে চলতে হয়— কিন্তু যদি একখানা কাগজ টেনে নিয়ে একটা ছবি অঁাকতে থাকি— তাহলে যা তা আঁকতে দ্বিধা করি নে। লোকে যদি বলে আমি ছবি আঁকতে পারি নে, তবে তাতে সঞ্চিত যশের অপচয় ঘটে না । তাই যখন কৰ্ত্তব্যের দায়ে ক্লাস্ত হয়ে পড়ি, যখন মানুষের কাছ থেকে অকারণ বৈরিতায় মন ব্যথিত হয়ে থাকে, তখন সেই অবসাদের সময় চিঠিপত্র লিখতে চেষ্টা করলে লেখনীকে গুরুভার বলে মনে হয়। তখন যেমন তেমন করে ছবি আঁকতে আমার বাধে না । তাই আমার জীবযাত্রাপথের শেষ প্রান্তে যখন আলো স্নান হয়ে এসেছে তখন ইচ্ছা করে ছবি একে সময় নষ্ট করি। সময় নষ্ট করবার অধিকার আমার হয়েচে । ছেলেবেলা থেকে আজ পর্য্যন্ত বরাদের অনেক বেশি কাজ করেছি— এখন যদি কৰ্ম্মশালার দ্বার বন্ধ করি তাহলে বেতন কাটা যাবে না। ૨ 8br