পাতা:চিঠিপত্র (নবম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুসলমান প্রজা অকারণে আমাকে একটাকা সেলামী দিয়েছিল । আমি বললুম, আমি তো কিছু দাবি করিনি। সে বললে, আমি না দিলে তুই খাবি কি ! কথাটা সত্য । মুসলমান প্রজার অন্ন এতকাল ভোগ করেছি। তাদের অস্তরের সঙ্গে ভালবাসি, তার ভালবাসার যোগ্য । আজ যদি তারা হঠাৎ আমাকে আঘাত করতে আসে, তা হ’লে পরম দুঃখে আমাকে এই কথাই ভাবতে হবে, কোনো আকস্মিক উত্তেজনায় তাদের মতিভ্ৰম ঘটেচে– এটা কখনোই তাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি নয় । দুদিনে এমন ক’রে যদি আমি ভাবতে পারি, তা হলেই এই ক্ষণকালের চিত্তবিকার দূর হতে পারবে । আমিও যদি রাগে অধীর হয়ে তাদেরই অস্ত্র কেড়ে তাদের উপর চালাই, তা হলেই এ বিকার চিরদিনের মত স্থায়ী হবে— শেষকালে আসবে বিনাশ । মুসলমান যদি কোনোরকম প্ৰবৰ্ত্তনায় হিন্দুকে নিপীড়ন করতে কুষ্ঠিত না হয়, তা হ’লে এ কথা মনে রাখতে হবে যে, এ শেল বাইরের নয়, এ মৰ্ম্মস্থানের বিস্ফোটক – এ নিয়ে রাগারাগি লড়াই করতে গেলে ক্ষত বেড়ে উঠতে থাকবে । বুদ্ধি স্থির রেখে এর মূলগত চিকিৎসার লাগ ছাড়া আর কোন উপায় নেই। বিলম্ব হলেও সে-ই একমাত্র পন্থা । ষে পরজাতির পক্ষে ভারতবর্ষ অশ্নের খালি, তারা যদি সেই অন্ন হ্রাস বা নাশের আশঙ্কায় আমাদের পরে কঠোর হয়ে ওঠে, তা হ’লে বুঝতে হবে সেটা স্বাভাবিক, এবং সেটা স্বার্থের জন্তে । এস্থলে তাদের শ্রেয়োবুদ্ধি বিচলিত হ’লে পরমার্থের দিকে না হোক, অর্থের দিকে একটা মানে পাওয়া যায়। কিন্তু আপন লোকের কৃত অন্ধ অন্যায় তাদের নিজেরই স্বার্থের বিরুদ্ধ । তারা চিরদিনের মত দেশের চিত্তে অবিশ্বাসকে আবিল ক’রে তোলে ; তাতে চিত্ব দিনের জন্যই তাদের নিজের ক্ষতি । ষে নৌকোয় সবাই পাড়ি দিচ্চি, দাড মাঝি বা কোনো আরোহীর পরে রাগ করে তার তলা ফুটো ক’রে দেওয়াকে জিৎ হওয়া মনে করা চলে 8 (, ծ