পাতা:চিঠিপত্র (নবম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যে, জীবনের কোনো এক অবসরে, আমি সারা জীবন যে রসের পিপাস্ক, তার উৎস খুজিতে বাহির হইয়াছিলাম, খুজিয়া পাইয়াছিলাম। আমার শ্ৰীগুরুকে আমি আপনার হৃদয়নন্দনেরই অমূল্য পারিজাত বলি, অথবা আপনার হৃদয়কুঞ্জের মঞ্জুতুলসী । তিনি যখন তাহার হৃদয়দয়িতের কণ্ঠলগ্ন হইলেন, তখন র্তাহার জন্মস্থান হইতে ছাড়াছাড়ি হইল। র্তার নবজীবনধারা নূতন খাতে বহিল, তথাপি তার চলন বলন, সৌন্দৰ্য্যজ্ঞান কবিত্ব, ভাবুকতা, প্রেম, রস, তাহাকে বিশেষ করিয়া তুলিলেও এ কথা তুলিতে দিল না— যে, অমুক কাননকুঞ্জে র্তাহার জন্ম। তার শৈশবের— বাল্যের কুলাচরিত প্রথায় সংপ্রাপ্ত শ্ৰীগৌরগোবিন্দ-উপাসনা সেদিন নবভাবে নবরূপে সুন্দর হইয়া উঠিল, যেদিন তিনি আপনার কাব্যরস পান করিলেন। আপনার “অন্তর্যামী” “জীবনদেবতা” আর র্তার হৃদয়দয়িত ও প্ৰাণেশ্বরী সেদিন এক হইলেন । তাহার বহুকাল পরে, সংসারের নানা দুৰ্ব্ব্যবহারে তিনি যখন কাব্যের পুষ্পহার খুলিয়া ফেলিয়া কঠোর কৰ্ম্মের স্বর্ণশুঙ্খল পরিলেন, তার তখনকার রূপ আমার কাছে সুস্পষ্ট না হইতেই আমি চলিয়া আসিয়াছি। সেই চিরকিশোরের কৈশোর যৌবনকে না ছ.ইতেই প্রৌঢ়ত্ব তাকে গ্রাস করিল।... ... আজ সেই কাব্যের উৎসকে অকস্মাৎ অভাবনীয় রূপে পাইয়া আমি যত্ন করি নাই, জড়ত্বের তামসিকতার আয়েসে চক্ষু মুদিয়া চণ্ডু টানিতেছিলাম, ইত্যবসরে কোন কঠোর হস্তের টানে আমার ধন চলিয়া যায় ! এ জন্মে আর আপনাকে দেখা, আপনার কথা শোনা, আপনাকে জানা চেন আমার হইল না। আমার জীবন অসমাপ্ত সৌভাগ্যে, সুসমাপ্ত দুর্ভাগ্যে পুর্ণ রহিয়া গেল – তবুও মনে রাখিবেন, আমি যতই কেননা অধম হই, আমি আপনার । কারণ, আমি আমার শ্ৰীগুরুর যে আনন্দসৌরভে মত্ত হইয়াছিলাম, তাহা শ্ৰীকৃষ্ণঅঙ্গবাহিত হইলেও তাহার মুল বনিয়াদের অনেকখানি আপনারই হৃদরণ্যপ্রস্থত। সেই গন্ধ ধরিয়া খুজিতে খুজিতে আপনাকে পাইয়া গিয়াছিলাম, 8 ዓ «