পাতা:চিঠিপত্র (নবম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তার পরে, অতএব বড়ো কৰ্ত্তব্যটাকে সস্তায় সেরে বড়ো পুণ্যটা লাভ করা হয়ে গেলে বাকিটা বাদ দিতে ভয় হয় না, তুঃখ হয় না— বিশেষত বাকিটাই যেখানে তুষ্কর । জাতকুল দেখে ব্রাহ্মণকে ভক্তি করা সহজ, লোকে তাই করে,— সে ভক্তি অধিকাংশ স্থলেই অস্থানে পড়ে নিস্ফল হয় ; যথার্থ ব্রহ্মণ্যগুণে যিনি ব্রাহ্মণ তিনি যে জাতেরই হোন, তাকে ভক্তির দ্বারা ভক্তির সত্যফল পাওয়া যায়, কিন্তু যেহেতু সেটা সহজ নয় এই জন্যই অস্থানে ভক্তির দ্বারা কৰ্ত্তব্যপালনের তৃপ্তিভোগ করা প্রচলিত হয়েচে । কালের ধৰ্ম্ম বলে কোনো পদার্থ নেই, মানবচরিত্রের তুৰ্ব্বলতাকে প্রশ্রয় দেবার ব্যবস্থা যদি থাকে তবে সেটাকে ঠেকানো যায় না । আমাদের দেশে সৰ্ব্বত্রই মানুষ বঞ্চিত উপেক্ষিত, মানুষের প্রতি কৰ্ত্তব্য যদি বা শাস্ত্রের শ্লোকে আছে আচারে নেই ; তার প্রধান কারণ, ধৰ্ম্মসাধনায় মানুষ গৌণ। শস্তায় পাপমোচন ও পুণ্যফল পাবার হাজার হাজার কৃত্রিম উপায় যে দেশের পঞ্জিকায় ও ভাটপাড়ার বিধানে অজস্র মেলে সে দেশে বীৰ্য্যসাধ্য সত্যসাধ্য ত্যাগসাধ্য বুদ্ধিসাধ্য ধৰ্ম্মসাধনা বিকৃত না হয়ে থাকতেই পারে না। যদি গঙ্গাস্নান করলেই, যদি বিশেষ তিথিতে যে-কোনো ব্রাহ্মণকে খাওয়ালেই পাপ যায় তাহলে সযত্নে আত্মসম্বরণপূর্বক পাপ না করাট স্বভাবতই পিছিয়ে পড়ে। যেটা অন্তরের জিনিষ, যেটা চৈতন্তের জিনিষ সেটাকে জড়ের অনুগত করে যদি নিয়ত তার অসম্মান করা হয় তবে আমাদের অন্তরপ্রকৃতি জড়ত্বে ভারগ্রস্ত হতে বাধ্য। দেবপ্রতিমার কাছে পাঠা বলিদানের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা (t 8