পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 কাকিমা, আমার কথা তোমাকে বিশ্বাস করতে হবে না। বোলতার কথাই বিশ্বাস কর। কিন্তু আমি বাপু সত্যি কথা বলছি শোন। আমি বোলতাকে চিঠি দেখালুম, তিনি বল্লেন আমি এর মাঝে মাঝে টীকে করি দাও। আমি কিছুতেই রাজি হচ্ছিলুম না! তবে একজন মানুষ নেহাৎ পেড়াপীড়ি করলে আর কি করি বল। লিখতে দিলুম, আর বল্লুম কিছু বানিয়ে লিখো না। তিনি বল্লেন তবে আর কি হল বেশ একটু মজা হবে সেই তো ভাল। কাকিমা কি লেখেন দেখা যাবে। বলে তিনি বানিয়ে লিখে দিলেন। আমি জানতুম তুমি আমার কথা বিশ্বাস করবে না। বোলতার লেখাটুকু দেখেই বিশ্বাস করবে ভেবেই আমি তাঁকে লিখতে বারণ করেছিলুম। আমি সত্যি কথা বল্লেও আমার কথা বিশ্বাস হয় না। তা বাপু বিশ্বাস করবার দরকার নাই। আমার কপাল মন্দ তার আর কি করব বল। কেউ বিশ্বাস করেন না কেউ চিঠি লেখেন না ইত্যাদি।

 বোলতার রুমাল রোজ ভিজে থাকে বটে। আমি জানতুম না যে তিনি কাঁদেন। তোমার চিঠিতে দেখলুম, এবার থেকে তাঁকে নানা কথা বলে, পাখী দেখিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখবো। আজ তোমার চিঠিটা যখন বোলতাকে শোনাচ্ছিলাম তখন তাঁর মুখের দিকে চেয়ে দেখি চোখদুটো জলে পুরে এসেছে। দেখে তাড়াতাড়ি চিঠিটা মুড়ে ফেল্লুম। রবিকাকার বাদাম ছাড়িয়ে দিতে হয়। এখন সময় হয়েছে, কাজ সেরে সুরে এসে আবার লিখতে বসবো।

 ভাই কাজ কর্ম সারা হল সন্ধ্যেও হয়ে এল। সূর্য অস্ত যাচ্ছে।

৯৩