পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নেই যাদের মৃত্যুতে কারু কোন ক্ষতি নেই এরকম লোক যেখানে সেখানে পড়ে আছে । আমাদের মত অসার অপদার্থ, কৰ্ম্মহীন জীবন নিয়ে পড়ে আছি আর সংসারের সার রত্ব চলে গেলেন । এ অবিচার কেন কে বলবে ? একটা সংসার ছারখার করে কয়েকটি শিশুকে অসহায় মাতৃহীন করে কি মঙ্গল ইচ্ছা পূর্ণ হ’ল জানি নে, তবু ভাবতে গেলে বলি “র্তার মঙ্গল ইচ্ছ। পূর্ণ হউক ৷” হয়ত বা এ সংসারে থাকৃতে গেলে অনেক দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে হ’ত— তিনি সতীলক্ষ্মী ছিলেন সব দুঃখ কষ্ট্রের হাত এড়িয়ে সব সুখ সম্পদের মধ্যে থেকেই যেখানে দুঃখ নেই শোক নেই সেই অমৃত লোকে গেছেন । তার মত লোকেরই উপযুক্ত স্থান সন্দেহ নেই। আজ যে গভীর বেদন অনুভব করছি ক্রমে সেটা কমে আসবে, সব বুঝেও থেকে থেকে মন হু হু শব্দে কেঁদে ওঠে । এখানে এক দণ্ডও থাকৃতে ইচ্ছে করছে না। নানা কণযকৰ্ম্মে ডুবে আছি। সবই করছি কিন্তু হাতে বশ নেই পায়ে জোর নেই মনে হচ্ছে এক দিকটা শূন্ত হয়ে গেছে। রবিকাকা, মীরা শমী ওদের বিষন্ন চেহারা আশে পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে । কাল রাত্তিরে স্বপ্নে দেখেছি রবিকাকা বলছেন “অমলা তুমি মীরা শমীর কাছে আসবে না ?” রবিকাকার সে উদাস বিষন্ন দৃষ্টি কিছুতেই ভুলতে পারছি নে । যিনি অভাব ঘটান তিনিই শান্তি আনেন, এখন একমাত্র ভরসা ভগবানের করুণা ; যে অসহায় শিশুদের আশ্রয় গেছে, প্রার্থনা করি ভগবানের অজস্র করুণ তাদের উপর বধিত হউক। মাতৃহীনদের মাতা হ’য়ে তিনি সৰ্ব্বদা নিরাপদে রাখুন। তোমার, আমার কোন সাধ্য নাই । রবিকাকা এখন কোথায় কি ভাবে আছেন লিখো । বেলা রথী ওদের সকলের খবর দিয়ে । বিবি, তোমাদের চিঠি পেলে অনেকটা ভাল লাগবে, কেউ আমার কষ্ট বোঝবার নেই বলে আরও বেশী কষ্ট হচ্ছে । বেলার কাছে চিঠি লিখতে সাহস হচ্ছে না। কত কথা একটু একটু করে সারাদিন মনে হচ্ছে, কি আর বলব, দুরে আছি বলে আরও বেশী ছট্‌ফট্‌ করছি । > X &