পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এখন রবীন্দ্রনাথের পরিবার ক্ষুদ্ৰ— পত্নী মৃণালিনী দেবী, শিশুকন্ত। বেল। এই সংসার লইয়। কবি গাজিপুরে উপস্থিত হইলেন। এইখানে তাহার দূর-সম্পকিত আত্মীয় আফিম-বিভাগের একজন প্রধান কর্মচারী গগনচন্দ্র রায় বাস করিতেন । র্তাহার সাহায্যে কবির সুখস্বচ্ছন্দে বাসোপযোগী ব্যবস্থা সমস্তই সহজেই সম্পন্ন হইয়াছিল । সপরিবারে গাজিপুরে বাস সাংসারিক কবিজীবনের প্রথম ও প্রধান পর্ব। আপনার সংসারে স্বামীকে আপনার মতো করিয়া পাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা স্ত্রীমাত্রের পক্ষে স্বাভাবিক | বৃহৎ ঠাকুরপরিবারের মধ্যে বাসে কবিপত্নীর সে অভিলাষ এ পর্যন্ত অপূর্ণই ছিল । গাজিপুর-বাসে পৃথকৃ সাংসারিক জীবনের সূত্রপাতে তাহা এই প্রথম কার্যে পরিণত হইল ; পক্ষান্তরে যৌবনের পরিপূর্ণতায় কবিও এখন প্রথম পাইলেন পত্নীকে ধরার সঙ্গিনীরূপে— প্রণয়িনীরূপে ‘আশা দিয়ে, ভাষা দিয়ে তাহে ভালবাসা দিয়ে, গড়ে তুলি মানস প্রতিমা ? -- মৃণালিনী দেবী যখন শিলাইদহে কুঠিবাড়িতে বাস করিতেন, সেই সময়ে মুলা সিং নামে একজন পাঞ্জাবী তাহার নিকট আসিয়া কাদিতে কাদিতে নিজ দুরবস্থা নিবেদন করিয়া কাতরভাবে প্রার্থনা করিল— “মাইজী, একটি চাকরি দিয়া আমাকে রক্ষা করুন, নতুবা আমি সপরিবারে মারা পড়িব ।” দরিদ্রের করুণ প্রার্থনায় মাইজার কোমল হৃদয় ব্যথিত হইয়া উঠিল । রবীন্দ্রনাথ তখন শিলাইদহে ছিলেন না, পক্ষান্তরে অপেক্ষা করাও তখন সম্ভব হইল না । কুঠিবাড়ির দরোয়ানের কার্যে মাসিক ১৫ টাকা বেতনে তিনি মুলা সিংকে নিযুক্ত করিলেন । দরিদ্রের দুঃখের কিঞ্চিৎ অবসান হইল । মুলা সিং-এর দেহ যেমন দীর্ঘ, তেমনই পরিপুষ্ট সুগঠিত । দেহের অনুপাতে দুবেলায় চার সের আটা সে খাইতে পারিত | একমাস চাকরির পরে সে দেখিল, তাহার স্বল্প বেতন ভূরিভোজনে নিঃশেষ হইয়াছে। বাড়িতে ১২৭