কিছুই পাঠাইতে পারিল না, বড়োই বিষণ্ণ হইল। ক্রমে ক্রমে ইহা মৃণালিনী দেবীর কর্ণগোচর হইলে তিনি মুলা সিংকে ডাকিয়া বিষাদের কারণ শুনিতে চাহিলেন, সেও অকপটে সমস্ত কথা তাহাকে জানাইল ; ব্যথিত হইয়া মাইজী সেইদিন অবধি প্রত্যহ সংসারের ভাণ্ডার হইতে চার সের আট দেওয়ার ব্যবস্থা করিয়া দিলেন। বেতন বৃদ্ধি হইল, কিন্তু আটার ব্যবস্থা পূর্ববৎই রহিল । এই সময় মৃণালিনী দেবী কুঠিবাড়িতে একটি শাক-সবজির বাগান করিয়াছিলেন । ইহা তাহারই তত্ত্বাবধানে ছিল । অবসরমত সময়ে সময়ে মেয়েদের সঙ্গে লইয়া বাগানের কাজকর্মও তিনি করিতেন। যে-সকল এস্টেটের কর্মচারী সপরিবারে বাস করিতেন তাহদের বাসায় এই বাগানের শাক-সবজি তরকারি তিনি পাঠাইয়া দিতেন ! অল্পবেতনভোগী আমলাদিগের জন্য সরকারি ব্যয়ে একটি মেস করিয়া সরকারি তহবিল হইতে ঠাকুর চাকরের বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করিয়াছিলেন । এই মেসেও বাগানের শাক-সবজি তরকারি সপ্তাহে দুইবার পাঠাইতেন । মৃণালিনী দেবী যেদিন শিলাইদহ হইতে চলিয়া আসেন সেদিন ঠাকুর চাকর ও আমলাদের বিষাদের সীমা ছিল না, বিশেষত মাইজীর বিদায়ে মুলা সিং-এর কী কান্না । সে যে মাইজীর করুণায় অপার দুঃখের পার পাইয়াছিল ! এ যে তাহার পক্ষে বিজয়াদশমীর দিন । বিষাদমলিন সকলকে কাছে আনিয়া মাইজী স্নিগ্ধ সাম্বনাবাক্যে বলিলেন– “শান্ত হও, আমি আবার আসব, তোমাদের কি কখনো ভুলতে পারি।" সমেহ প্রবোধবাক্যে সকলে কিছু আশ্বস্ত হইল । স্নেহের ইহাই মোহিনী শক্তি ! মহৰ্ষির কনিষ্ঠ ভ্রাত নগেন্দ্রনাথের বিধবা পত্নী ত্রিপুরাসুন্দরী মহর্ষির পুত্রবধূগণের কাকিম । তিনি জোড়াসাকোর বাড়িতে থাকিতেন না, বিজিতলায় একটি বাড়িতে যাবজ্জীবন বাস করিয়াছিলেন । মহর্ষিদেব এই বাড়ি তাহাকে দিয়েছিলেন । মধ্যে মধ্যে আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ ծ Ջb
পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।