অবনীন্দ্রনাথ ‘ঘরোয়া’য় লিখিয়াছেন— থিয়েটারের অভিনেতা, অভিনেত্রীরা পার্কস্ট্রীটের বাড়ির অভিনয় দেখিয়া যায়, এবং কয়েক দিন পরে এমারেলডে যে অভিনয় হয় তাহাতে অভিনেত্রীরা ঠাকুরবাড়ির অভিনয়ের ঢং আশ্চর্যরূপে অনুকরণ করিয়াছিল । বিদ্যালয়ের প্রকোষ্ঠে বিদ্যালাভের বেদনা কবির মনে সততই জাগরূক ছিল । শিক্ষায় গতানুগতিকতার অনুবর্তনে তাহার কিছুমাত্র নিষ্ঠা ছিল না। আদর্শ শিক্ষাব্রতী রবীন্দ্রনাথ তাই স্বীয় আদর্শে বিদ্যালয়-প্রতিষ্ঠার সংকল্প করিয়া শান্তিনিকেতনে ১৩০৮ সালের ৭ই পৌষে আদর্শ বিদ্যালয়— ব্রহ্মচর্যাশ্রমের প্রতিষ্ঠা করেন । শিলাইদহে যে আদর্শে কবি গৃহবিদ্যালয়ের সূত্রপাত করিয়াছিলেন, এই আশ্রম তাহারই পূর্ণ পরিণত প্রতিষ্ঠান । মহৰ্ষির দীক্ষাগ্রহণের দিন ৭ই পৌষ, আশ্রমপ্রতিষ্ঠা-হেতু কবিবরেরও জীবনেতিহাসের স্মরণীয় ঐতিহাসিক দিবস । আশ্রমপ্রতিষ্ঠার সময় কবির বিশেষ অর্থকছুতা ছিল। ঋণগ্রস্ত হইয়। তিনি বিদ্যালয়ের ব্যয়ভার বহন করিতেন । পুরী-স্থিত পাকা বাড়ি এই সময়ে তিনি আশ্রম-রক্ষণার্থ বিক্রয় করিয়াছিলেন । অলংকার বিক্রয় করিয়া মৃণালিনী দেবী বিদ্যালয়ের পরিচালনায় কবির সহায়তা করিয়াছিলেন । সংকল্প সাধনার ব্যবসায় মহতেরই প্রকৃতিসিদ্ধ। -- আশ্রমের কার্যে কবির সহধর্মিণী সহকর্মিণী হইয়াছিলেন । বিদ্যালয়ের নিয়মানুসারে ছাত্ৰগণের করণীয় সকল বিষয় তত্ত্বাবধান তিনি অবশ্যকর্তব্য মনে করিতেন। পাছে বালকগণের কষ্ট হয়, এই ভাবিয়াই তিনি তাহাদের খাওয়ার ও জলখাবারের ভার নিজের হাতেই লইয়াছিলেন ও দেখিয়াশুনিয়া খাওয়াইতেন । এই অপত্যনির্বিশেষ স্নেহ তাহাকে বালকগণের মাতৃস্থানীয়া করিয়া রাখিয়াছিল। বিদ্যালয়ে যোগদানের পুর্বে এক আত্নীয়ের নিকটে শুনিয়াছিলাম—“আশ্রমের অধ্যাপকগণ ও বালকেরা যে প্রকার মুখে বাস করেন বাবুদের ভাগ্যেও তাহা সম্ভব হয় না। রথীন্দ্রনাথের ১৩২
পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।