পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এ-সব কথা কিছু-কিছু আমার প্রত্যক্ষ, কিছুটা আমার দিদির কাছে শোনা |. ■ 臺 কবিপ্রিয়ার মধ্যে একটা জিনিস খুব উজ্জ্বল হয়ে ছিল, আর সেটা তার জীবনপথের আলো হয়ে তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেত। সেটি শ্বশুরের প্রতি তার অপরিসীম ভক্তিশ্রদ্ধা ও বিশ্বাস । কতবার যে তার মুখে শুনেছি, “বাবামশায়ের মত এটা নয়, আমি এ কাজ কখনো করব না।” কবির সঙ্গে তর্ক করেছেন এভাবে, “বাবামশায় এটা পছন্দ করেন না, এটা আমি করব না ।" কিংবা, “বাবামশায় থাকলে তুমি একাজ করতে পারতে?” এটা যেন র্তার জীবনের মূলমন্ত্র ছিল । মহর্ষিদেবের সন্তানদের মধ্যে বোধ করি সব চেয়ে প্রিয় ছিলেন কনিষ্ঠটি । এই পুত্রবধূটর প্রতিও তার মেহের অন্ত ছিল না । আর প্রগাঢ় স্নেহ ছিল রথীর প্রতি । রথীর রঙ ময়লা এটা কিছুতে মহৰ্ষি স্বীকার করতেন না । বলতেন, “তোমরা কী যে বল, রখী তো রবির চেয়ে ফরশ৷ ” এ নিয়ে তার সামনে কেউ কিছু বলতে সাহস না পেলেও আড়ালে বেশ হাসাহাসি হত । কবি প্রিয়ার কিন্তু কবির উপর অখণ্ড প্রতাপ ছিল । কবি তাকে বেশ ভয় করতেন । র্তার অভিমানও প্রবল ছিল, আর সে-অভিমান ভাঙতে কবিকে বেশ বেগ পেতে হত । কিন্তু এটে উঠতে পারতেন না তিনি তার মেজ মেয়েটিকে। রানী এক অদ্ভুত মেয়ে ছিল। কি যে এক সন্ন্যাসিনীর মন নিয়ে এসে জন্মেছিল ঐশ্বর্যের মধ্যে ! বিধাতার অনেক অদ্ভুত খেয়ালই বোঝা যায় না তো ! খুব যে সুন্দর দেখতে ছিল তা নয়, কিন্তু চোখদুটির মধ্যে এমন একটি ভাব ছিল যে তা থেকে চোখ ফেরানো যেত না । শিশুকাল থেকে তার সাজগোজ ভালো লাগত না, চুল বাধা তো একটা বিরক্তিজনক ব্যাপার ছিল । খাওয়া-দাওয়া সম্বন্ধেও তার ঔদাসীন্তের অন্ত ছিল না । মাছমাংস খাওয়ার স্পৃহামাত্র ছিল না। কিন্তু জেদ ছিল প্রচণ্ড । সে যখন এক দৃপ্ত ভঙ্গিতে ঘাড় বাকিয়ে দাড়াত তখন কারো সাধ্য ছিল না > ○ >