পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাকে দিয়ে কিছু করায় । এজন্য শাসন সে যথেষ্ট পেত। তার মা তো একেবারে অস্থির হয়ে পড়তেন এক-এক সময়ে– “কী যে ছিষ্টিছাড়া মেয়ে জন্মেছে, আর পারি নে, বাপু ।” এক-এক সময়ে বলতেন । রাণী কিন্তু বকুনি শাসন শাস্তি সবেতেই অচল অটল । কবি কিন্তু তার এই মেয়েটিকে খুব ভালোবাসতেন, তাকে বুঝতেনও হয়তো । লেগে যেত কবি প্রিয়ার সঙ্গে আমার দিদির সঙ্গে রানীকে নিয়ে । তিনি বলতেন, ‘কাকিম, আপনার কেউ ওকে বোঝেন না । ওর মধ্যে যে একটা মহাপ্রাণ অাছে তা আপনারা দেখেন না।” রানী যখন খোলা ছাতে মনের আনন্দে ছুটে বেড়াত, চুলগুলো তার বাতাসে নাচত মনে হত একটি তেজী ঘোড়া যেন মুক্তির আনন্দে ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে । রানী সম্বন্ধে দুটো ঘটনা খুব উজ্জল হয়ে আছে আমার মনে । নীতুবাবু রানীকে বডড ভালোবাসতেন, তার প্রত্যেক জন্মদিনে বেশ দামি দামি উপহার এনে দিতেন । একবার রানীর জন্মদিনে আমরাও গিয়েছি। ‘লেড ল'র বাড়ি থেকে একটা বাক্স এল নতুবাবুর উপহার নিয়ে। বাক্স থেকে বেরোল এক বহুমূল্য ফ্রক, লেস ফ্রিল ইত্যাদি দিয়ে তৈরি সিল্কের ফ্রক। ফ্রকের বাহার দেখে সকলেই খুব খুশি, সকলেই খুব উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতে লাগলেন । রানীকে ডেকে সেই ফ্রক তার গায়ে চড়ানো হল । সে হতভম্ব হয়ে আয়নার কাছে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইল। একবার লেসগুলোতে হাত দেয় আর মুখ বাকায়, একবার ফ্রিলগুলো তুলে তুলে দেখে আর মুখ বাকায় । একটু পরে পটপট করে লেসগুলো ফ্রিলগুলো ছিড়ে ফেলে দিয়ে ফ্রকট। টেনে গা থেকে খুলে ফেলে দিয়ে ঘাড় বাকিয়ে দাড়িয়ে রইল। এদিকে তো হুলস্থল। তার মা আমার দিদিকে ডেকে বললেন, “ও অমলা, দেখে যাও তোমার অসাধারণ বোনটির কাণ্ড । আমি এখন নীতুকে মুখ দেখাব কী করে ?”—ইত্যাদি-ইত্যাদি । আমার দিদি তাকে কোলে করে তুলে নিয়ে পাশের ঘরে কোঁচে বসলেন । সে তার গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ লুকিয়ে চুপ করে রইল। একটু পরে দিদি বললেন, ծ (f Ջ