পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*রানী, কাজটা ভালো কর নি ভাই । তোমার মা দুঃখ পেয়েছেন, তোমার নীত দা শুনলে কত দুঃখ পাবেন।” সে মুখ তুলল, বিষন্ন দুটি চোখ মেলে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “অমলাদি, ওরা জানে আমি এ-সব ভালোবাসি নে, এ-সব পরতে আমার কষ্ট হয়, তবু কেন আমায় ওরা জোর করে পরায় ?” আর একবার মহাল থেকে মাছ এসেছে, সবাই ছুটে দেখতে গেছে । দুটো প্রকাণ্ড কাতলা মাছ তখনো একটু-একটু খাবি খাচ্ছে। সবাই নানারকম জল্পনা-কল্পনা করছে, মাছ দিয়ে কী-কী রান্না হবে । রানীও এক পাশে এসে দাড়িয়েছিল, হঠাৎ সে আর্তস্বরে কেঁদে উঠল, “ও মা, মা গো, ঐ মাছ তোমরা খাবে ? ওরা যে এখনো বেঁচে আছে।” বলে দুহাত দিয়ে চোখ ঢেকে ছুটে পাশের ঘরে বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে কী তার কান্না ! একদিন কবি এসে বললেন, “ছোটোবউ, রানীর বিয়ে ঠিক করে এলুম, মাঝে মাত্র তিনটি দিন আছে, তার পরদিন বিয়ে ” কবি প্রিয়া অবাক হয়ে বললেন, “তুমি বল কি গো ? এরই মধ্যে মেয়ের তুমি বিয়ে দেবে ?” কবি বললেন, “ছেলেটিকে আমার বড় ভালো লেগেছে ছোটোবউ, যেমন দেখতে সুন্দর তেমনি মিষ্টি অমায়িক স্বভাব । রণনীটা যে জেদী মেয়ে, ওর বৰ একটু ভালোমানুষ-গোছের না হলে চলবে কেন ? আর সত্যেন বিয়ের দুদিন পরেই বিলেত চলে যাবে । সে ফিরতে ফিরতে রানী বেশ বড় হয়ে উঠবে।” কবিপ্রিয়া বললেন, “এই তিন দিনের মধ্যে সব জোগাড় কী করে হবে ?” “হবে হবে, সব হবে, কলকাতা শহরে নাকি কিছু আটকায় ? শুধু তুমি একটু প্রসন্ন মনে কাজে লেগে যাও তো, ছোটোবউ, সব ঠিক হয়ে যাবে * হলও তাই । তবে রানীর বিয়েতে সমারোহ বেশী কিছু হল না। রানী কিন্তু এ বন্ধনটা খুব খুশি মনে নিতে পারল না, তার ভুক একটু কুঁচকেই রইল। বিয়ের পরই বর বিদায় হবে শুনে একটু নিশ্চিন্ত হল । বিয়ের সব কাজেই সে লক্ষ্মী মেয়ের মতো মাথা নিচু করে রইল।. ) @ ○