পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একসময়ে নজরে পড়ল জনশূন্ত মাঠের মাঝে ভাঙা পাড় অর্ধেক বোজা একটি পুকুর— তার যেটুকু জল আছে, ঢেকে গেছে অসংখ্য শাদা পদ্মফুলে। দেখে এত ভালো লাগল, মাকে ডেকে দেখালুম। তার পর কত বছর গেছে, প্রতিবারই বোলপুর কলকাতা যাতায়াতের সময় সেই পদ্মপুকুর দেখার চেষ্টা করি । কেবল দেখতে পাই— পুকুরে জল নেই, মাটি ভরে মাঠের সঙ্গে পুকুর সমান হয়ে গেছে, পদ্ম সেখানে আর ফোটে না । কলকাতায় এসে মা খুবই অস্বস্থ হয়ে পড়লেন। অ্যালোপ্যাথ ডাক্তাররা কী অসুখ ধরতে না পারায় বাবা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করাতে লাগলেন । তখনকার দিনের প্রসিদ্ধ ডাক্তাররা— প্রতাপ মজুমদার, ডি. এন. রায় প্রভৃতি সর্বদাই বাড়িতে আসতে থাকলেন । তারা সকলেই বাবাকে সমীহ করতেন, এমন-কি, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাবিদ্যায় তাদের সমকক্ষ মনে করতেন । মায়ের চিকিৎসা সম্বন্ধে বাবার সঙ্গে পরামর্শ করেই তারা ব্যবস্থা দিতেন । এদের চিকিৎসা ও বাবার অক্লান্ত সেবা সত্ত্বেও মা সুস্থ হলেন না । আমার এখন সন্দেহ হয় তার অ্যাপেণ্ডিসাইটিস হয়েছিল । তখন এ বিষয়ে বিশেষ কিছু জানা ছিল না, অপারেশনের প্রণালীও আবিষ্কৃত হয় নি । মৃত্যুর আগের দিন বাবা আমাকে মায়ের ঘরে নিয়ে গিয়ে শয্যাপার্থে র্তার কাছে বসতে বললেন । তখন তার বাকৃরোধ হয়েছে । আমাকে দেখে চোখ দিয়ে কেবল নীরবে অশ্রধারা বইতে লাগল। মায়ের সঙ্গে আমার সেই শেষ দেখা । আমাদের ভাইবোনদের সকলকে সে রাত্রে বাবা পুরানো বাড়ির তেতলায় শুতে পাঠিয়ে দিলেন । একটি অনির্দিষ্ট আশঙ্কার মধ্যে আমাদের সারা রাত জেগে কাটল । ভোরবেলায় অন্ধকার থাকতে বারান্দায় গিয়ে লালবাড়ির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলুম। সমস্ত বাড়িটা অন্ধকারে ঢাকা, নিস্তব্ধ, নিঝুম ; কোনো সাড়াশব্দ নেই সেখানে । আমরা তখনি বুঝতে পারলুম আমাদের মা আর নেই, তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । সমবেদন জানাবার জন্য সেদিন রাত পর্যন্ত লোকের ভিড় । বাবা 〉もW)