পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৯. অরুণপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় শমীর সহিত দিন কাটিত বলিয়াই হয়ত আমার জীবনে আমি আর এক জনের স্নেহের পরিচয় অত্যন্ত সহজে পাইয়াছিলাম। আজও মনে পড়ে, এক দিন সকালে পড়াশুনা সাঙ্গ করিয়া, শমী, আমি ও আমাদের মাষ্টারমহাশয় জগদানন্দবাবু ক্রিকেট খেলায় মত্ত ছিলাম, এমন সময়ে মাঠের পথে দুইটি ভদ্রমহিলাকে যাইতে দেখিলাম। পরে জানিয়েছিলাম, তাহারা শমীর মা ও পিসিমা । শমী ব্যাট ফেলিয়া তাহদের দিকে ছুটিয়া গেল। আমি বল কুড়াইবার জন্য দাড়াইয়াছিলাম, শমীর পশ্চাতে পশ্চাতে আমিও ছুটিলাম । কেন যে ছুটিয়াছিলাম তাহা আজও বলিতে পারি না— বোধ হয়, শমী যাহা করিত তাহাই আমারও করিতে ভাল লাগিত বলিয়া যাহা হউক, আমি কতক দূর মাত্র ছুটিয়া গিয়াছি, দেখিলাম, শমী তাহার পিসিমার কাছে পৌছাইয়া গিয়াছে ও তাহার পিসিমা তাহাকে জড়াইয়া বরিয়া আদর করিতেছেন । আমার গতি থামিয়া গেল, আমি হঠাৎ দাড়াইয়া গেলাম। মনে হইল, আমি কেন ছুটিয়া যাইতেছি, আমাকে কোলে বা বুকে লইবার এখানে তো কেহ নাই। কতক্ষণ হাত দিয়া চক্ষু ঢাকিয়া দাড়াইয়াছিলাম জানি না। তার পরই অনুভব করিলাম, শমীর মা আমার কাছে আসিয়া আমাকে তাহার বুকের মধ্যে জড়াইয়া ধরিলেন । তখন আমার পক্ষে আর শান্ত থাকা অসম্ভব হইয়া পড়িল । আমার দুই চক্ষু দিয়া যে অশ্রুধারার বর্ষণ হইয়াছিল, তাহার ফলে শমীর মা আমারও মা হইয়া গেলেন । তার সেদিনকার প্রাতভ্রমণের ব্যাঘাত ঘটিল, আমাকে সঙ্গে লইয়া তিনি নিজ গৃহে ফিরিলেন । সেদিন প্রায় সমস্তক্ষণই আমি তাহার কাছে কাছে ছিলাম এবং পরে তাহারই কোলে মাথা রাখিয়া ঘুমাইয়৷ ի পড়িয়াছিলাম। তার পর হইতে র্তাহার কাছে আমি প্রায়ই যাইতাম, তাহার শয়ন-ঘরে ঘুমাইতাম। শমীর মা ত শুধু আমার মা ছিলেন না, আমরা যে তাহাকে শাস্তিনিকেতনের আশ্রমের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বলিয়া ۹ و ۵