পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রধান কর্ম্মচারীরা বড় বড় কাগজের তাড়া নিয়ে এসে প্রণাম করে মুখের দিকে চেয়ে দাঁড়ালেন তখন আমার ঘুমের ঘোর আমার সুখের স্বপন একেবারে ছুটে গেল। একবার মনে মনে ভাবলুম, যদি এদের মধ্যে কেউ হঠাৎ সুর করে গেয়ে ওঠে—

“ওগো দেখি আঁখি তুলে চাও,
তোমার চোখে কেন ঘুমঘোর!”

 তা হলে ও গানটা বোধ হয় মায়ার খেলার দ্বিতীয় সংস্করণ থেকে একেবারে উঠিয়ে দিই। কিন্তু সে রকম সুর করে গান গাবার ভাব কারো দেখ্‌লুম না। দুই একজনের একটু খানি কাঁদুনির সুর ছিল কিন্তু তাদের বক্তব্য বিষয়টা ঘুমের ঘোর প্রেমের ডোর নিয়ে নয়— তারা বেতন বৃদ্ধি চায়। তাদের অনেকগুলি ছেলেপুলে, হজুরের শ্রীচরণ ছাড়া তাদের আর কোন ভরসা নেই, হজুর তাদের মাতা এবং পিতা। এ ছাড়া কতকগুলি সাবেক ইজারাদারের নামে বাকি খাজনার ডিক্রি করা হয়েছে তারা সুদ খরচা মাপ নিয়ে কিস্তিবন্দী করে টাকা দিতে চায় এবং তাদের দেনার মধ্যে যে সমস্ত ওজর আছে তারও একটা সদ্বিচার প্রার্থনা করে। এর মধ্যে করুণরস এবং অশ্রুজল যথেষ্ট আছে, অনেকে হয় ত বাড়ি ঘর দোর নিলেম করে সর্বস্বান্ত হতে বসেছে কিন্তু এতে সুর বসিয়ে অপেরা হবার যো নেই— কিন্তু নলিন নয়নের কোণে একটুখানি ছল্‌ছল্ করে আসুক দেখি অমনি কবির কবিতা গাইয়ের গান বাজিয়ের বাজন। সমস্ত ধ্বনিত হয়ে উঠ্‌বে, অমনি দর্শক শ্রোতা এবং পাঠকের বক্ষস্থল অশ্রুজলে ভেসে যাবে। এম্‌নি এই সংসার!

২৬