পাতা:চিঠিপত্র (প্রথম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অবস্থায় আমার পায়ে বিছে কামড়ায়— যখন খুব যন্ত্রণা বোধ হচ্ছিল আমি আমার সেই কষ্টকে, আমার দেহকে আমার আপনার থেকে বাইরের জিনিষ বলে অনুভব করতে চেষ্টা করলুম— ডাক্তার যেমন অন্য রোগীর রোগযন্ত্রণা দেখে, আমি তেমনি করে আমার পায়ের কষ্ট দেখতে লাগ্‌লুম— আশ্চর্য্য ফল হল— শরীরে কষ্ট হতে লাগ্‌ল অথচ সেটা আমার মনকে এত কম ক্লিষ্ট করলে যে আমি সেই যন্ত্রণা নিয়ে ঘুমতে পারলুম। তার থেকে আমি যেন মুক্তির একটা নতুন পথ পেলুম। এখন আমি সুখদুঃখকে আমার বাইরের জিনিষ এই ক্ষণিক পৃথিবীর জিনিষ বলে অনেকসময় প্রত্যক্ষ উপলব্ধি করতে পারি— তার মত শান্তি ও সান্ত্বনার উপায় আর নেই। কিন্তু বারম্বার পদে পদে এইটেকে মনে এনে সকল রকমের অসহিষ্ণুতা থেকে নিজেকে বাঁচাবার চেষ্টা করা চাই— মাঝে মাঝে ব্যর্থ হয়েও হতাশ হলে হবেনা— ক্ষণিক সংসারের দ্বারা অমর আত্মার শান্তিকে কোনমতেই নষ্ট হতে দিলে চল্‌বে না— কারণ, এমন লোকসান আর কিছুই নেই— এ যেন দুপয়সার জন্যে লাখটাকা খোয়ানো। গীতায় আছে— লোকে যাকে উদ্বেজিত করতে পারে না এবং লোককে যে উদ্বেজিত করে না— যে হর্ষ বিষাদ ভয় এবং ক্রোধ থেকে মুক্ত সেই আমার প্রিয়।

 কাল মঙ্গলবারে বলুর শ্রাদ্ধ। তার পরে কর্ম্ম শেষ করে যেতে এ সপ্তাহ নিশ্চয়ই চলে যাবে। এর আর কোন উপায় নেই। নগেন্দ্র ত ইতিমধ্যে তার যশোরের কাজ শেষ করে

১॥৩
৩৩