পাতা:চূর্ণ প্রতিমা - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০
দারোগার দপ্তর, ১৬৮ সংখ্যা।

কি ভাবিতেছে। যুবকের বয়স প্রায় ত্রিশ বৎসর। তাহাকে দেখিতে শ্যামবর্ণ ও শীর্ণ। তাহার চক্ষু কোটরগ্রস্ত, দেখিলেই বোধ হয়, লোকটা নেশাখোর। তাহার পরিধানে একখানি ময়লা কাপড় ছাড়া আর কিছুই ছিল ন॥ তাহার হাত পা লৌহশিকলে আবদ্ধ।

 আমাকে দেখিয়াই সে দাঁড়াইয়া উঠিল এবং আমার নিকট আসিতে চেষ্টা করিল, কিন্তু পদদ্বয় শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকায় সহজে আসিতে পারিল না। আমি অনেক পাগল দেখিয়ছি, পাগলের মেজাজ আমার বেশ জানা আছে। তাহাদের সহিত রূঢ় ব্যবহার না করিলে তাহারা বশীভূত হয় না। আমি জহরকে নিকটে আসিতে চেষ্টা করিতে দেখিয়া, অতি কর্কশভাবে বলিলাম, “যেখানে আছ, সেইথানেই থাক; আমার কাছে আসিবার চেষ্ট। করিও না। আমি সংসারী নহি যে, তোমায় দেখিয়া ভয় পাইব। আমি তোমার মত অনেক পাগল আরাম করিয়াছি। যদি আমার প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দাও, তাহা হইলে তুমিও শীঘ্র আরোগ্য হইবে।”

 আমার কথা শুনিয়া জহর আবার বাসয়া পড়িল; কোন কথা কহিল না। সে আপন মনে কখন হাসিতে, কখন কাঁদিতে লাগিল। আমার কিম্বা তাহার পিতার দিকে দৃকপাতও করিল না।

 আমি তখন জহরকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “জহরলাল! আমি তোমার গোটাকতক কথা জিজ্ঞাসা করিতে ইচ্ছা করি।”

 জহর কথা কহিল না; ঘাড় নাড়িয়া উত্তর দিল। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “তুমি হঠাৎ এমন উন্মাদ পাগল হইলে কিসে?”

 এবার জহরের মুখ ফুটিল। সে বলিল, “সেকথা আমি কি করিয়া বলি।”