পাতা:চূর্ণ প্রতিমা - প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
দারোগার দপ্তর, ১৬৮ সংখ্যা।

 প্রশ্ন শুনিয়া জহর আমার দিকে কট্‌মট্‌ করিয়া চাহিয়া রহিল। সে শূন্য় দৃষ্টি পাগলেরই শোভা পায়। আমার মনে কেমন সন্দেহ হইল, আমিও জহরের দিকে ভাল করিয়া চাহিয়া রহিলাম।

 বোধ হয়, জহর আমার মনোগত ভাব বুঝিতে পারিয়াছিল। সে একবার মুখ অবনত করিয়াই, হাসিতে হাসিতে আমার দিকে চাহিয়া বলিল, “আপনি দেবতা। তাহা না হইলে কিছু হইয়াছিল কি না, কেমন করিয়া জানিতে পারিলেন? যখন সমস্তই জানেন, তখন আর আমায় জিজ্ঞাসা করেন কেন?”

 আমি সে কথা চাপা দিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “শুনিলাম, তুমি নফরের সঙ্গে হাজতে গিয়াছিলে; মুক্তিলাভ করিয়া বাড়ী আসিয়াই পাগল হইয়াছ। এ কথা সত্য কি?”

 জ। আজ্ঞা হাঁ!। কিন্ত আপনি সকলই জানেন, মিথ্যা জিজ্ঞাসার দরকার কি?

 অ। হাজতে গিয়াছিলে কেন?

 জ। আর কেন আমায় কষ্ট দেন।

 আ। কষ্ট কি?

 জ। আপনি যখন সকলই জানেন, তখন কেন আমি বকিয়া মরি।

 আ। আমি সামান্য সন্ন্যাসী। বারবার আমার অত সুখ্যাতি করিও না। আমার মনোমধ্যে অহঙ্কার জন্মিতে পারে, যেমন শুনিয়াছি, তেমনই জানি। তুমি যেমন জান, তুমি যেমন বলিতে পারিবে, অপরে তোমার মুখ হইতে শুনিয়া তেমন বলিতে পরিবে না। সেই জন্য তোমার মুখ হইতে শুনিবার আমার এত ইচ্ছা। আছি শুনিয়াছি, একখানি দামী হীরা হারাইয়াছে।