এই বলিয়া মহেন্দ্র “অনেক ্রাত হইয়াছে” বলিয়া পাশ ফিরিয়া শুইল।
কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ পুনর্বার এ পাশে ফিরিয়া কহিল, “চুনি, কাজ নাই, তুমি নাই-ৰা গেলে।”
আশা কাতর হইয়া কছিল, “আৰার বারণ করিতেছ কেন। এবার একবার না গেলে তোমার সেই ভর্ৎসনাটা আমার গায়ে লাগিয়া থাকিবে। আমাকে দু-চার দিনের জন্যও পাঠাইয়া দাও।”
মহেন্দ্র কহিল, “আচ্ছা।”
বলিয়া পাশ ফিরিয়া শুইল।
কাশী যাইবার আগের দিন আশা বিনোদিনীর গলা জড়াইয়া কহিল, “ভাই বালি, আমার গা ছুইয়া একটা কথা বল।”
বিনোদিনী আশার গাল টিপিয়া ধরিয়া কছিল, “কী কথা ভাই। তোমার অনুরোধ আমি রাখি না?”
আশা। কে জানে ভাই, আজকাল তুমি কী রকম হইয়া গেছ। কোনোমতেই যেন আমার স্বামীর কাছে বাহির হইতে চাও না।
বিনোদিনী। কেন চাই না, সে কি তুই জানিস নে ভাই। সেদিন বিহারীবাবুকে মহেন্দ্রবাবু যে কথা বলিলেন, সে কি তুই নিজের কানে শুনিস নাই। এ-সকল কথা যখন উঠিল তখন কি আর বাহির হওয়া উচিত— তুমিই বলো-না ভাই বালি।
ঠিক উচিত যে নহে, তাহা আশা বুঝিত। এ-সকল কথার লজ্জাকরতা যে কত দূর, তাহাও সে নিজের মন হইতেই সম্প্রতি বুঝিয়াছে। তবু বলিল, “কথা অমন কত উঠিয়া থাকে, সে-সব যদি না সহিতে পারিস তবে আর ভালোবাসা কিসের ভাই। ও কথা ভুলেতে হইবে।”
বিনোদিনী। আচ্ছা ভাই, ভুলিব।
আশা। আমি তো ভাই, কাল কাশী যাইব, আমার স্বামীর যাহাতে কোনো অসুবিধা না হয়, তোমাকে সেইটে বিশেষ করিয়া দেখিতে হইবে। এখনকার মতো পালাইয়া বেড়াইলে চলিবে না।
বিনোদিনী চুপ করিয়া রহিল। আশা বিনোদিনীর হাত চাপিয়া ধরিয়া কহিল, “মাথা খা ভাই বালি, এই কথাটা আমাকে দিতেই হইবে।”
বিনোদিনী কহিল, “আচ্ছা।”