করিয়া রাখা অসাধ্য হইবে।
মহেন্দ্র কহিল, “তা বেশ তো, ভালোই তো। কিন্তু বিহারী, তুমি যেখানে যাও একটা হাঙ্গাম না করিয়া ছাড় না। হয়তো সেখানে পাড়া হইতে রাজ্যের ছেলে জোটাইয়া বসিবে, নয়তো কোন্ গোরার সঙ্গে মারামারিই বাধাইয়া দিবে— কিছু বলা যায় না।”
বিহারী মহেন্দ্রের আন্তরিক অনিচ্ছা বুঝিয়া মনে মনে হাসিল; কহিল, “সেই তো সংসারের মজা, কিসে কী হয়, কোথায় কী ফেসাদ ঘটে, আগে হইতে কিছুই বলিবার জো নাই। বিনোদ-বোঠান, ভোরের বেলায় ছাড়িতে হইবে, আমি ঠিক সময়ে আসিয়া হাজির হইব।”
রবিবার ভোরে জিনিসপত্র ও চাকরদের জন্য একখানি থার্ড্ক্লাস ও মনিবদের জন্য একখানি সেকেণ্ডক্লাস গাড়ি ভাড়া করিয়া আনা হইয়াছে। বিহারী মস্ত একটা প্যাক্বাক্স সঙ্গে করিয়া যথাসময়ে আসিয়া উপস্থিত। মহেন্দ্র কহিল, “ওটা আবার কী আনিলে। চাকরদের গাড়িতে তো আর ধরিবে না।”
বিহারী কহিল, “ব্যস্ত হইয়ো না দাদা, সমস্ত ঠিক করিয়া দিতেছি।”
বিনোদিনী ও আশা গাড়িতে প্রবেশ করিল। বিহারীকে লইয়া কী করিবে, মহেন্দ্র তাই ভাবিয়া একটু ইতস্তত করিতে লাগিল। বিহারী বোঝাটা গাড়ির মাথায় তুলিয়া দিয়া চট্ করিয়া কোচবাক্সে চড়িয়া বসিল।
মহেন্দ্র হাঁফ ছাড়িয়া বাঁচিল। সে ভাবিতেছিল, ‘বিহারী ভিতরেই বসে কি কী করে তাহার ঠিক নাই।’
বিনোদিনী ব্যস্ত হইয়া বলিতে লাগিল, “বিহারীবাবু, পড়িয়া যাবেন না তো?”
বিহারী শুনিতে পাইয়া কহিল, “ভয় করিবেন না, পতন ও মুর্ছা— ওটা আমার পার্টের মধ্যে নাই।”
গাড়ি চলিতেই মহেন্দ্র কহিল, “আমিই না-হয় উপরে গিয়া বসি, বিহারীকে ভিতরে পাঠাইয়া দিই।”
আশা ব্যস্ত হইয়া তাহার চাদর চাপিয়া কহিল, “না, তুমি যাইতে পারিবে না।”
বিনোদিনী কহিল, “আপনার অভ্যাস নাই, কাজ কী, যদি পড়িয়া যান!”
মহেন্দ্র উত্তেজিত হইয়া কহিল, “পড়িয়া যাব? কখনো না।”
বলিয়া তখনই বাহির হইতে উদ্যত হইল।
বিনোদিনী কহিল, “আপনি বিহারীবাবুকে দোষ দেন, কিন্তু আপনিই তো হাঙ্গাম বাধাইতে অদ্বিতীয়।”