পাতা:ছড়ার ছবি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তখনো তাঁর শক্ত ছিল মুগুর-ভাজা দেহ,
বয়স যে ষাট পেরিয়ে গেছে বুঝত না তা কেহ।
ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি, চোখদুটি জ্বল্‌জ্বলে—
মুখ যেন তাঁর পাকা আমটি, হয় নি সে থল্‌থলে।
চওড়া কপাল, সামনে মাথায় বিরল চুলের টাক,
গোঁফ-জোড়াটার খ্যাতি ছিল, তাই নিয়ে তাঁর জাঁক।


দিন ফুরােত, কুলুঙ্গিতে প্রদীপ দিত জ্বালি,
বেলের মালা হেঁকে যেত মােড়ের মাথায় মালী।
চেয়ে রইতেম মুখের দিকে শান্তশিষ্ট হয়ে,
কাঁসর-ঘণ্টা উঠত বেজে গলির শিবালয়ে।
সেই সেকালের সন্ধ্যা মােদের সন্ধ্যা ছিল সত্যি,
দিন-ভ্যাঙানাে ইলেক্‌ট্রিকের হয় নিকো উৎপত্তি।
ঘরের কোণে কোণে ছায়া, আঁধার বাড়ত ক্রমে—
মিট্‌মিটে এক তেলের আলােয় গল্প উঠত জমে।
শুরু হলে থামতে তাঁরে দিতেম না তাে ক্ষণেক,
সত্যি মিথ্যে যা-খুশি তাই বানিয়ে যেতেন অনেক।
ভূগােল হত উলটো-পাল্টা, কাহিনী আজগুবি—
মজা লাগত খুবই।
গল্পটুকু দিচ্ছি, কিন্তু দেবার শক্তি নাই তাে
বলার ভাবে যে রঙটুকু মন আমাদের ছাইত।


হুশিয়ারপুর পেরিয়ে গেল ছন্দৌসির গাড়ি,
দেড়টা রাতে সর্‌হরােয়ায় দিল স্টেশন ছাড়ি।

২২