পাতা:ছড়ার ছবি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দূর শহরে একটা কিছু যাবেই যাবে জুটে,
এই আশাতেই লগ্ন দেখে ভােরবেলাতে উঠে
দুর্গা ব’লে বুক বেঁধে সে চলল ভাগ্যজয়ে—
মা ডাকে না পিছুর ডাকে অমঙ্গলের ভয়ে।
স্ত্রী দাঁড়িয়ে দুয়ার ধরে দুচোখ শুধু মােছে,
আজ সকালে জীবনটা তার কিছুতেই না রােচে
ছেলে গেছে জাম কুড়ােতে দিঘির পাড়ে উঠি,
মা তারে আজ ভুলে আছে তাই পেয়েছে ছুটি।
স্ত্রী বলেছে বারে বারে যে করে হােক খেটে
সংসারটা চালাবে সে, দিন যাবে তার কেটে।
ঘর ছাইতে খড়ের আঁঠির জোগান দেবে সে যে,
গোবর দিয়ে নিকিয়ে দেবে দেয়াল পাঁচিল মেঝে।
মাঠের থেকে খড়কে কাঠি আনবে বেছে বেছে,
ঝাঁটা বেঁধে কুমােরটুলির হাটে আসবে বেচে।
ঢেঁকিতে ধান ভেনে দেবে বামুনদিদির ঘরে,
খুদকুঁড়াে যা জুটবে তাতেই চলবে দুর্বছরে।
দূর দেশেতে বসে বসে মিথ্যা অকারণে
কোনোমতেই ভাব্না যেন না রয় স্বামীর মনে।
সময় হল, ঐ তাে এল খেয়াঘাটের মাঝি,
দিন না যেতে রহিমগঞ্জে যেতেই হবে আজি।
সেইখানেতে চৌকিদারি করে ওদের জ্ঞাতি,
মহেশখুডাের মেঝো জামাই, নিতাই দাসের নাতি।
নতুন নতুন গা পেরিয়ে অজানা এই পথে
পৌঁছবে পাঁচ দিনের পরে শহর কোনােমতে।
সেইখানে কোন্ হালসিবাগান, ওদের গ্রামের কালাে
শর্ষেতেলের দোকান সেথায় চালাচ্ছে খুব ভালাে।

৪৬