পাতা:ছড়ার ছবি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গ্রামের লােকে ছি-ছি করে, জাতে ঠেলল তাকে—
একলা কেবল অচল বুড়ি আদর করে ডাকে।
সে বলে, ‘তুই বেশ করেছিস যা বলুক-না যেবা,
ভিক্ষা মাগার চেয়ে ভালাে দুঃখী দেহের সেবা।’


জমিদারের মায়ের শ্রাদ্ধ, বেগার খাটার ডাক—
রাই ডোম্নির ছেলে বললে, কাজের যে নেই ফাঁক,
পারবে না আজ যেতে। শুনে কোতলপুরের রাজা
বললে, ওকে যে ক’রে হােক দিতেই হবে সাজা।
মিশনরির স্কুলে পড়ে, কম্পােজিটরের
কাজ শিখে সে শহরেতে আয় করেছে ঢের—
তাই হবে কি ছােটোলােকের ঘাড়-বাঁকানাে চাল!
সাক্ষ্য দিল হরিশ মৈত্র, দিল মাখনলাল—
ডাক-লুঠের এক মােকদ্দমায় মিথ্যে জড়িয়ে ফেলে
গােষ্ঠকে তাে চালান দিল সাত বছরের জেলে।
ছেলের নামের অপমানে আপন পাড়া ছাড়ি
ডােম্‌নি গেল ভিন গাঁয়েতে পাততে নতুন বাড়ি।
প্রতি মাসে অচলবুড়ি দামােদরের পারে
মাস-কাবারের জিনিস নিয়ে দেখে আসত তারে।
যখন তাকে খোঁটা দিল গ্রামের শম্ভু পিসে
‘রাই ডোম্নির ’পরে তােমার এত দরদ কিসে’
বুড়ি বললে, ‘যারা ওকে দিল দুঃখরাশি
তাদের পাপের বােঝা আমি হালকা করে আসি।’


পাতানাে এক নাৎনি বুড়ির একজ্বরি জ্বরে
ভুগতেছিল স্বরূপগঞ্জে আপন শ্বশুরঘরে।

৫১