সুধিয়া
গয়লা ছিল শিউনন্দন, বিখ্যাত তার নাম,
গােয়ালবাড়ি ছিল যেন একটা গােটা গ্রাম।
গােরু-চরার প্রকাণ্ড ক্ষেত, নদীর ওপার চরে,
কলাই শুধু ছিটিয়ে দিত পলি-জমির ’পরে ।
জেগে উঠত চারা তারই, গজিয়ে উঠত ঘাস,
ধেনুদলের ভােজ চলত মাসের পরে মাস।
মাঠটা জুড়ে বাঁধা হত বিশ-পঞ্চাশ চালা,
জমত রাখাল ছেলেগুলাের মহােৎসবের পালা।
গােপাষ্টমীর পর্বদিনে প্রচুর হত দান,
গুরুঠাকুর গা ডুবিয়ে দুধে করত স্নান।
তার থেকে সর ক্ষীর নবনী তৈরি হত কত,
প্রসাদ পেত গাঁয়ে গাঁয়ে গয়লা ছিল যত।
বছর তিনেক অনাবৃষ্টি, এল মন্বন্তর ;
শ্রাবণ মাসে শােণনদীতে বান এল তার পর ।
ঘুলিয়ে ঘুলিয়ে পাকিয়ে পাকিয়ে গর্জি ছুটল ধারা,
ধরণী চায় শূন্য-পানে সীমার চিহ্নহারা ।
ভেসে চলল গােরু বাছুর, টান লাগল গাছে।
মানুষে আর সাপে মিলে শাখা আঁকড়ে আছে।
বন্যা যখন নেমে গেল, বৃষ্টি গেল থামি
আকাশ জুড়ে দৈত্য-দেবের ঘুচল সে পাগলামি।
শিউনন্দন দাঁড়ালো তার শূন্য ভিটেয় এসে-
তিনটে শিশুর ঠিকানা নেই, স্ত্রী গেছে তার ভেসে।