পাতা:ছড়ার ছবি - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আজ বিকালে হাটের মধ্যে হিঁচড়ে নিয়ে তােকে
দুলাল স্বয়ং মারবে চাবুক, দেখবে সকল লােকে।’
মনিববাড়ির পেয়াদা এল দিন হল যেই শেষ।
দেখলে দড়ি আছে পড়ি, মাধো নিরুদ্দেশ।
মাকে শুধায়, ‘এ কী কাণ্ড।’ মা শুনে কয়, ‘নিজে
আপন হাতে বাঁধন তাহার আমিই খুলেছি যে।
মাধাে চাইল চলে যেতে; আমি বললেম, যেয়াে,
এমন অপমানের চেয়ে মরণ ভালাে সেও।’
স্বামীর ’পরে হানল দৃষ্টি দারুণ অবজ্ঞার;
বললে, “তােমার গােলামিতে ধিক্ সহস্রবার।”


পেরােলাে বিশ-পঁচিশ বছর; বাংলাদেশে গিয়ে
আপন জাতের মেয়ে বেছে মাথাে করল বিয়ে।
ছেলে মেয়ে চলল বেড়ে, হল সে সংসারী;
কোন্‌খানে এক পাটকলে সে করতেছে সর্দারি।
এমন সময় নরম যখন হল পাটের বাজার
মাইনে ওদের কমিয়ে দিতেই, মজুর হাজার হাজার
ধর্মঘটে বাঁধল কোমর; সাহেব দিল ডাক—
বললে, ‘মাধাে, ভয় নেই তাের, আলগােছে তুই থাক্।
দলের সঙ্গে যােগ দিলে শেষ মরবি-যে মার খেয়ে।’
মাধাে বললে, ‘মরাই ভালাে এ বেইমানির চেয়ে।’
শেষ পালাতে পুলিস নামল, চলল গুঁতােগাঁতা;
কারাে পড়ল হাতে বেড়ি, কারাে ভাঙল মাথা।
মাথাে বললে, ‘সাহেব, আমি বিদায় নিলেম কাজে,
অপমানের অন্ন আমার সহ্য হবে না যে।’

৬১