পাতা:ছড়া-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছড়া

মোষের শিঙে ব’সে ফিঙে ন্যাজ দুলিয়ে নাচে—
শুধোয় নাচন, সিঁথি আমার নিয়েছে কোন্ মাছে?
মাছের লেজের ঝাপটা লাগে, শালুক ওঠে দুলে—
রোদ পড়েছে নাচনমণির ভিজে চিকন চুলে।
কোথায় ঘাটের ফাটল থেকে ডাকল কোলা ব্যাঙ,
খড়গ্‌পুরের ঢাকে ঢেলে বাজল ড্যাডাঙ ড্যাঙ।
কাঁপছে ছায়া আঁকাবাঁকা, কলমি-পাড়ের পুকুর—
জল খেতে যায় এক-পা-কাটা তিন-পেয়ে এক কুকুর।
হুইস্‌ল্ বাজে, আছে সেজে পাইকপাড়ার পাত্রী,
শেয়ালকাঁটার বন পেরিয়ে চলে বিয়ের যাত্রী।
গ্যাঁ গোঁ করে রেডিয়োটা—কে জানে কার জিত,
মেশিন্‌গানে গুঁড়িয়ে দিল সভ্যবিধির ভিত।
টিয়ের মুখের বুলি শুনে হাসছে ঘরে-পরে—
রাধে কৃষ্ণ, রাধে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে!


দিন চলে যায় গুন্‌গুনিয়ে ঘুমপাড়ানির ছড়া,
শান-বাঁধানো ঘাটের ধারে নামছে কাঁখের ঘড়া।
আতাগাছের তোতাপাখি, ডালিমগাছে মৌ,
হীরেদাদার মড়্‌মড়ে থান, ঠাকুরদাদার বউ
পুকুর-পাড়ে জলের ঢেউয়ে দুলছে ঝোপের কেয়া,
পাটনি চালায় ভাঙা ঘাটে তালের ডোঙার খেয়া।

৩৫