চেয়েছিনু আঁখি মেলে,
বহুদুর হতে এলে,
আঙিনাতে পা বাড়িয়ে
ফিরে গেলে হেসে।
তীর-বায়ে তরী গেল
ওপারের দেশে।
মাপে মিলল, কিন্তু লয়ে মিলেছে কি! সমুদ্র যখন স্থির থাকে আর সমুদ্র যখন ঢেউ খেলিয়ে ওঠে তখন তার দৈর্ঘ্যপ্রস্থ সমান থাকে, কিন্তু তার ভঙ্গির বৈচিত্র্য ঘটে। এই ভঙ্গি নিয়েই ছন্দ। বিধাতা সেই ভঙ্গির দিকে তাকিয়েই মৃদঙ্গ বাজান, বোল বদলিয়ে দেন, তাই মনের মধ্যে ভিন্ন রকমের আঘাত লাগে।
আমি অন্যত্র[১] বলেছি, প্রাকৃত-বাংলার ছন্দে যতিবিভাগ সকল সময় ঠিক কাটাকাটা সমান ভাগে নয়। পাঠক এক জায়গায় মাত্রা হরণ করে আরেক জায়গায় ওজন রেখে তা পূরণ করে দিলে নালিশ চলে না। এইজন্যে একই কবিতা পাঠক আপন রুচি-অনুসারে কিছুপরিমাণে ভিন্নরকম করে পড়তে পারেন।
রূপসাগরে ডুব দিয়েছি
অরূপ রতন আশা করি।
ঘাটে ঘাটে ফিরব না আর
ভাসিয়ে আমার জীর্ণ তরী।
এই কবিতাটি আমি পড়ি ‘রূপ’ এবং ‘ডুব’ এবং ‘অরূপ’ শব্দের ধ্বনিকে দীর্ঘ করে। অর্থাৎ ঐ উকারগুলোর ওজন হয় দুইমাত্রার কিছু বেশি। তখন তারই পূরণস্বরূপে ‘ডুব দিয়েছি’র পরে যতিকে থামতে দেওয়া যায় না। অপরপক্ষে ‘ঘাটে ঘাটে’ শব্দে মাত্রাহ্রাসের ত্রুটি পূরণ করবার
- ↑ পৃ ৬৩-৬৪ দ্রষ্টব্য।