পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
ছন্দ

এগার মাত্রার ছন্দ বানিয়ে নতুন কীর্তি স্থাপন করব। আমি বলি তা কর কিন্তু পুলকিত হোয়ো না, কেননা কাজটা নিতান্তই সহজ। দশ মাত্রার পরে আর একটা মাত্রা যোগ করা একেবারেই দুঃসাধ্য ব্যাপার নয়। যেমন—

চামেলির ঘনছায়া-বিতানে
বনবীণা বেজে ওঠে কী তানে।
স্বপনে মগন সেথা মালিনী
কুসুমমালায় গাঁথা শিথানে।

অন্যরকমের মাত্রাভাগ করতে চাও সেও কঠিন নয়।যেমন—

মিলন-সুলগনে | কেন বল্
নয়ন করে তোর | ছল্‌ছল।
বিদায়দিনে যবে | ফাটে বুক,
সেদিনো দেখেছি তো | হাসিমুখ।

তারপরে তের মাত্রার প্রস্তাবটা শুনতে লাগে খাপছাড়া এবং নতুন, কিন্তু পয়ার থেকে একমাত্রা হরণ করতে দুঃসাহসের দরকার হয় না। সে কাজ অনেকবার করেছি, তা নিয়ে নালিশ ওঠেনি। যথা—

গগনে গরজে মেঘ ঘন বরষা।

এক মাত্রা যোগ করে পয়ারের জ্ঞাতিবৃদ্ধি করাও খুবই সহজ। যথা—

হে বীর, জীবন দিয়ে মরণেরে জিনিলে,
নিজেরে নিঃস্ব করি বিশ্বেরে কিনিলে।

ষোল মাত্রার ছন্দ দুর্লভ নয়। অতএব দেখা যাক সতর মাত্রা:

নদীতীরে দুই | কূলে কূলে |
কাশবন দুলি- | ছে।
পূর্ণিমা তারি | ফুলে ফুলে |
আপনারে ভুলি- | ছে।