পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অনেক স্থলেই স্বকীয় পরিভাষার সহায়তা নিতে বাধ্য হয়েছি। ফলে শেষোক্ত পরিভাষাগুলিরও সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিতে হয়েছে। এই নীতি অবলম্বন না করলে রবীন্দ্রনাথের ছন্দতত্বের সামগ্রিক ব্যাখ্যা অসম্ভব হত।

 দুই, ইতিহাস। রবীন্দ্রনাথের ছন্দবিষয়ক অধিকাংশ (বিশেষতঃ দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বের) প্রবন্ধের পেছনেই রয়েছে কোনো-না-কোনো উপলক্ষের প্রেরণা। স্বতঃপ্রবৃত্ত রচনার সংখ্যা খুব কম। সেই উপলক্ষের ইতিহাস জানা থাকলে প্রবন্ধ গুলি অনুধাবন করা সহজ হবে, এই বিবেচনায় ‘পাঠপরিচয়’ বিভাগে সে ইতিহাস যথাসম্ভব সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করতে চেষ্টিত হয়েছি। আশা করি তাতে পাঠকের শুধু ছন্দজিজ্ঞাসা নয়, কৌতুহল-নিবৃত্তিরও সহায়তা হবে। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক জে. ডি. এণ্ডারসনের পত্রাবলীর কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই বিদেশী বাংলাসাহিত্যানুরাগী ছন্দজিজ্ঞাসুর পত্রাবলী শুধু রবীন্দ্রনাথের ছন্দচর্চার ইতিহাস জানার পক্ষে নয়, বাংলা ছন্দের স্বরূপ অনুধাবনের পক্ষেও বিশেষ মূল্যবান্‌। বস্ততঃ তাঁকেই বাংলার প্রথম যথার্থ ছান্দসিক বলে অভিহিত করা যায়। এই গুরুত্বের বিষয় বিবেচনা করে রবীন্দ্রসদনে রক্ষিত এণ্ডারসনের পত্রাবলীর বহু প্রাসঙ্গিক অংশ ‘পাঠপরিচয়’ বিভাগে উদ্ধৃত করা গেল। আশা করি তাতে বাংলার ছন্দচিন্তা সমৃদ্ধতর হবে।

 এই গ্রন্থের সম্পাদনায় ব্রতী হয়ে প্রতিপদেই এ কাজের দুঃসাধ্যতার বিষয় উপলব্ধি করতে হয়েছে। তা ছাড়া, দীর্ঘকাল ধরে নান প্রতিকূলতার মধ্যে ক্রমে ক্রমে অগ্রসর হতে হয়েছে। এসব কারণে কোনো কোনো বিষয়ে কিছু-কিছু অপূর্ণতা, ও অসমতা থেকে যাওয়া বিচিত্র নয়। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে পূর্ণতা- ও সমতা-বিধানের প্রয়াস করা