পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১০
ছন্দ

এই ছন্দ সম্বন্ধে বলা হয়েছে ‘দ্বাত্রিংশন্মাত্রাঃ পাদে সুপ্রসিদ্ধাঃ’। এই ছন্দকে বাংলায় ভাঙতে গেলে এইরকম দাঁড়ায়।

কুঞ্জপথে জ্যোৎস্নারাতে
চলিয়াছে সখীসাথে
মল্লিকা-কলিকার
মাল্য হাতে।[১]

চার পংক্তিতে এই ছন্দের পূর্ণরূপ এবং সেই পূর্ণরূপের মাত্রাসংখ্যা বত্রিশ। ছন্দে মাত্রাগণনার এই ধারা আমি অনুসরণ করা কর্তব্য মনে করি। মনে নেই আমার কোনো পূর্বতম প্রবন্ধে অন্য মত[২] প্রকাশ করেছি কি না, যদি করে থাকি তবে ক্ষমা প্রার্থনা করি।

 সবশেষে পুনরায় বলি, ছন্দের স্বরূপনির্ণয় করতে হলে সমগ্রের মাত্রাসংখ্যা, তার কলাসংখ্যা ও কলাগুলির মাত্রাসংখ্যা জানা আবশ্যক। শুধু তাই নয়, যেখানে ছন্দের রূপকল্প একাধিক পদের দ্বারা সম্পূর্ণ হয় সেখানে পদসংখ্যাও বিচার্য। যথা—

বর্ষণশান্ত
পাণ্ডুর মেঘ যবে ক্লান্ত
বন ছাড়ি মনে এল নীপরেণুগন্ধ,
ভরি দিল কবিতার ছন্দ।

এখানে চারটি পদ এবং প্রত্যেক পদ নানা অসমান মাত্রায় রচিত, সমস্তটাকে নিয়ে ছন্দের রূপকল্প। বিশেষজাতীয় ছন্দে এইরূপ পদ ও মাত্রা গণনাতেও আমি পিঙ্গলাচার্যের[৩] অনুবর্তী।

 উদয়ন—১৩৪১ জ্যৈষ্ঠ
  1. সংস্কৃত ও প্রাকৃত ছন্দশাস্ত্রমতে পদের অন্তস্থিত লঘুধ্বনি অনেক সময় গুরু অর্থাৎ দ্বিমাত্রক বলে গণ্য হয়। সেই হিসাবে এখানে ‘হাতে’ শব্দের ‘তে’ ধ্বনিটিকে দ্বিমাত্রক বলে গণ্য করতে হবে।
  2. ৪১-৪৩ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।
  3. বিখ্যাত ছন্দশাস্ত্রকার। এঁর নামে দুইখানি বই প্রচলিত আছে, একটি সংস্কৃত ও একটি প্রাকৃত। প্রথমটি (ছন্দঃসূত্রম্) খ্রীস্টের পূর্ববর্তী কালে এবং দ্বিতীয়টি (প্রাকৃতপৈঙ্গলম্) খ্রীস্টীয় চতুর্দশ শতকে রচিত বলে পণ্ডিতেরা অনুমান করেন।