২
[সবচেয়ে সহজ ও প্রাথমিক ছন্দ হচ্ছে দুই ধ্বনিমাত্রার দুই পদপাতন। ছাত্র-অবস্থায় তার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’। আমার ঘরের কাছে মেহেদি গাছের বেড়া। খবর নিতে গেলেম তার ছন্দটা কী। দেখি ডাঁটার ডাইনে একটি পাতা বাঁয়ে একটি পাতা, তার পরেই একটি যতি। এই তো সমান ভাগে দুই মাত্রার ছন্দ। দ্বিপদীর চাল।[১] অন্যগাছে অন্যমাত্রার ছন্দ। যেমন শিমুল গাছ ছাতিম গাছ। এক সময়ে বনচ্ছায়ায় যখন গাছের অলংকারশাস্ত্র অধ্যয়ন করেছি তখন তাদের ছন্দের খবর কিছু আদায় করতে পেরেছিলেম।]
দুই মাত্রা বা দুই মাত্রার গুণক নিয়ে যেসব ছন্দ তারা পদাতিক; বোঝা সামলিয়ে ধীরপদক্ষেপে তাদের চাল। এই জাতের ছন্দকে পয়ারশ্রেণীয় বলব। সাধারণ পয়ারে প্রত্যেক পংক্তিতে দুটি করে ভাগ, ধ্বনির মাত্রা ও যতির মাত্রা মিলিয়ে প্রত্যেক ভাগে আটটি করে মাত্রা, সুতরাং সমগ্র পয়ারের ধ্বনিমাত্রাসংখ্যা চোদ্দ এবং তার সঙ্গে মিলেছে যতিমাত্রাসংখ্যা দুই, অতএব সর্বসমেত ষোল মাত্রা।
বচন নাহি তো মুখে | তবু মুখখানি • •
হৃদয়ের কানে বলে | নয়নের বাণী • •।
আট মাত্রার উপর ঝোঁক না রেখে প্রত্যেক দুই মাত্রার উপর ঝোঁক যদি রাখি তবে সেই দুলকি চালে পয়ারের পদমর্যাদার লাঘব হয়।
কেন | তার | মুখ | ভার | বুক | ধুক | ধুক | • •,
চোখ | লাল | লাজে | গাল | রাঙা | টুক | টুক | • •।
- ↑ মানে দুইমাত্রার বা সমমাত্রার চাল। ‘দ্বিপদী’ শব্দটি এখানে পারিভাষিক অর্থে গ্রহণীয় নয়। পারিভাষিক অর্থে ‘দ্বিপদী’ মানে ‘পয়ার’।