দিবানিশি ফাটি রোষে। ঘোর নীল বিবর্ণ অনল
শিখাসংঘ আলোড়িয়া দাপাদাপি করে দেশময়
তমোহস্ত এড়াইতে, প্রাণ যথা কালের কবল।[১]
স্থিতিস্থাপকতা ছাড়া পয়ারজাতীয় ছন্দের আর দুটি মহদ্গুণ আছে। এক তার ভারবহনশক্তি,[২] আর তার গাম্ভীর্য। যাকে ধ্বনিমাত্রা বলি তার আছে সরু-মোটা ভেদ। ‘চন্দনচর্চিত’ শব্দটা অক্ষরগণনায় আট মাত্রা, অন্তত সংস্কৃত ছন্দে তার এই ওজনই পাকা। দুর্বল বাহনের পিঠে চড়ালেই ওজনের কমি-বেশি পড়ে ধরা।]
তিন-তিন মাত্রায় যার গ্রন্থিযোজনা এমন একটি ছন্দের দৃষ্টান্ত দেখাই।
আঁখির পাতায় নিবিড় কাজল
গলিছে নয়ন-সলিলে।
অক্ষরসংখ্যা সমান রেখে এই দুটো পদে যুক্তবর্ণ যদি চড়াই তাহলে সেটা কেমন হয়, যেমন এক-এক সময়ে দেখা যায় জোয়ান পুরুষ ক্ষীণ স্ত্রীর ঘাড়ে বোঝা চাপিয়ে পথে চলে নির্মমভাবে। প্রমাণ দিই।
চক্ষুর পল্লবে নিবিড় কজ্জল
গলিছে অশ্রুর নির্ঝরে।
কিন্তু এই বোঝা পয়ারজাতীয় পালোয়ানের স্কন্ধে চাপালে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকবে না। প্রথমে বিনা-বোঝার চালটা দেখানো যাক।
শ্রাবণের কালো ছায়া নেমে আসে তমালের বনে
যেন দিক্-ললনার গলিত কাজল-বরিষনে।
এইটিকে গুরুভার করে দিই।
বর্ষার তমিস্রচ্ছায়া ব্যাপ্ত হল অরণ্যের তলে
যেন অশ্রুসিক্তচক্ষু দিগ্বধূর গলিত কজ্জলে।
এতটা ভারবৃদ্ধি যে সম্ভব হয় তার কারণ পয়ার স্থিতিস্থাপক।