পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছন্দের প্রকৃতি
১২৩

অসংগতি অধিকাংশ স্থলে ব্যঙ্গকাব্যেরই প্রয়োজন মেটাতে পারে। যথা—

বিলাতে পালাতে ছটফট করে নব্য গউড়ে
অরণ্যে যে-জন্যে গৃহগবিহগপ্রাণ দউড়ে।
স্বদেশে কাঁদে সে, গুরুজনবশে কিচ্ছু হয় না,
বিনা হ্যাট্‌টা কোট্‌টা ধুতি-পিরহনে মান রয় না।[]

‘মানসী’ লেখবার সময় আমার মনে প্রথম সংকল্প এল যে, যুক্তধ্বনিকে দুই মাত্রার গৌরব দিয়ে ছন্দকে ধ্বনিবন্ধুর করব।[] সকলেই জানেন বাংলা ছন্দে যুক্তবর্ণ তখন ঐকমাত্রিক শ্রেণীতে গণ্য ছিল। সেই জন্যেই ‘বদনমণ্ডলে ভাসিছে ব্রীড়া’ এমনতরো লাইনের সৃষ্টিতেও কবির সংকোচ ছিল না।[]

 প্রথমত সেদিন যুক্তবর্ণকে পয়ারেও দিলেম দুই মাত্রার আসন।[] লিখলেম

নিম্নে যমুনা বহে স্বচ্ছশীতল,
ঊর্ধ্বে পাষাণতট শ্যাম শিলাতল।

অনতিকাল পরেই বোঝা গেল পয়ারের উপর এ-আইন চালাবার কোনোই প্রয়োজন নেই। বিনা বাধায় লেখা যেতে পারে

উন্মত্ত যমুনা বহে, আবর্তিত জল
দুর্গম শৈলের তটে উদ্দাম উচ্ছল।

যদি লেখা যায়

হিমালয় নামে গিরি নগ-অধিরাজ

তাহলে হিমালয়ের মতো অত বড়ো পদার্থেরও উপর মন চলে যায়

  1. শিখরিণী ছন্দ। অকারান্ত ধ্বনিকে অকারান্তরূপে এবং দীর্ঘস্বরান্ত ধ্বনিকে দীর্ঘরূপে উচ্চারণ করা আবশ্যক। দৃষ্টান্তটি দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি রচনা (ভারতী, ১২৮৬ আশ্বিন, পৃ ২৬৪) থেকে গৃহীত।
  2. ৬৭ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।
  3. ৫৫ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।
  4. ৬৭ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।