এ-কথা বোঝা শক্ত নয় যে, ‘অনাথপিণ্ডদ’ নামটার খাতিরে নিয়ম রদ করেছিলেম। গার্ড এসে গাড়ির কামরায় বরাদ্দর বেশি মানুষকে ঠেসে ঢুকিয়ে দিয়েছে, ঘুষ খেয়ে থাকবে কিংবা আগন্তুক ভারি দরের।
সেকালে অক্ষরগনতিকরা তিনমাত্রামূলক ছন্দে যুক্তধ্বনি বর্জন করে চলতুম। কিন্তু তাতে রচনায় অতিলালিত্যের দুর্বলতা এসে পৌঁছত।[১] সেটা যখন আমার কাছে বিরক্তিকর হল তখন যুক্তধ্বনির শরণ নিলুম। ছন্দটা একদিন ছিল যেন নবনী দিয়ে গড়া।
বরষার রাতে জলের আঘাতে
পড়িতেছে যুথী ঝরিয়া,
পরিমলে তারি সজল পবন
করুণায় উঠে ভরিয়া।
এই দুর্বলতার মধ্যে যুক্তবর্ণ এসে দেখা দিল।
নববর্ষার বারিসংঘাতে
পড়ে মল্লিকা ঝরিয়া,
সিক্তপবন সুগন্ধে তারি
কারুণ্যে উঠে ভরিয়া।
ধ্বনির দুইমাত্রা এবং তিনমাত্রা বাংলা ছন্দের আদিম এবং রূঢ়িক উপাদান। তারপরে এই দুই এবং তিনের যোগে যৌগিকমাত্রার ছন্দের উৎপত্তি। তিন+দুই, তিন+চার, তিন+দুই+চার প্রভৃতি নানা প্রকার যোগ চলেছে আধুনিক বাংলা ছন্দে। তিন+দুই-মাত্রামূলক ছন্দের দৃষ্টান্ত।
আঁধার রাতি জ্বেলেছে বাতি
অযুতকোটি তারা,
আপন কারা-ভবনে পাছে
আপনি হয় হারা।
- ↑ দ্রষ্টব্য ৬৬ পৃষ্ঠা।