পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৬
ছন্দ

দেখা যাচ্ছে এখানে পদশেষের অংশটিকে খর্ব করা হয়েছে। যদি লেখা যেত

আঁধার রাতি জ্বেলেছে বাতি
আকাশ ভরি অযুত তারা

তাহলে ছন্দের কাছে দেনা বাকি থাকত না। কিন্তু পূর্বোক্ত প্রথম শ্লোকটির পদশেষে পাঁচমাত্রার থেকে তিনমাত্রাকে জবাব দেওয়া হয়েছে। তাহলে বুঝতে হবে সেই তিনমাত্রা দেহত্যাগ করে ঐখানেই বসে আছে যতিকে ভর করে।

 কিন্তু এই কৈফিয়তটা সম্পূর্ণ হল বলে মনে হয় না, আরো কথা আছে। প্রকৃতির কাজের অলংকরণতত্ত্বটা আলোচ্য। দুই পা দুই হাত নিয়ে দেহটা দাঁড়াল, দুই কাঁধে দুটো মুণ্ড বসালেই সম্মিতি অর্থাৎ symmetry ঘটত। তা না করে দুই কাঁধের মাঝখানে একটি মুণ্ড বসিয়ে সমাপ্তিটা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। কৃষ্ণচূড়ার গাছে ডাঁটার দুধারে দুটি করে পত্রগুচ্ছ চলতে চলতে প্রান্তে এসে থামল একটিমাত্র গুচ্ছে। অলংকরণের ধারা যেখানে পূর্ণ হয়েছে সেখানে একটিমাত্র তর্জনী, ছোটো একটি ইশারা।

 সকল ভাষারই যতি আছে, কিন্তু যতিকে বাটখারাস্বরূপ করে ছন্দের ওজন পূরণ বাংলা ছন্দ ছাড়া আর কোনো ছন্দে আছে কি না জানিনে। সংস্কৃত ছন্দে এই রীতি বিরল, তবু একেবারে পাওয়া যায় না তা নয়।

বদসি যদি কিঞ্চিদপি দন্তরুচিকৌমুদী
হরতি দরতিমিরমতি ঘোরম্ • •।[১]

 যতিকে কেবল বিরতির স্থান না দিয়ে তাকে পূর্তির কাজে লাগাবার অভ্যাস আরম্ভ হয়েছে আমাদের ছড়ার ছন্দ থেকে। ছড়া আবৃত্তি করবার সময় আপনি যতির জোগান দেয় আমাদের কান।

  1. দ্রষ্টব্য ১৫-১৬ পৃষ্ঠা।