পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছন্দের প্রকৃতি
১২৭

কাক কালো বটে, পিক সেও কালো,
কালো সে ফিঙের বেশ,
তাহার অধিক কালো যে কন্যা
তোমার চিকন কেশ।

এমন করে ছন্দটাকে পুরোপুরি ভরিয়ে দিলে কানের কাছে ঋণী হতে হত না। কিন্তু এতে ছড়ার জাত যেত। ছড়ার রীতি এই যে, সে কিছু ধ্বনি জোগায় নিজে, কিছু আদায় করে কণ্ঠের কাছ থেকে; এ দুয়ের মিলনে সে হয় পূর্ণ।[১] প্রকৃতি আমের মধুরতায় জল মিশিয়েছেন, তাকে আমসত্ত্ব করে তোলেননি; সেজন্যে রসজ্ঞ ব্যক্তিমাত্রই কৃতজ্ঞ। তেমনি যথেষ্ট যতি মিশোল করা হয়েছে ছড়ার ছন্দে, শিশুকাল থেকে বাঙালি তাতে আনন্দ পায়। সে সহজেই আউড়েছে

কাক কালো, কোকিল কালো,
কালো ফিঙের বেশ,
তাহার অধিক কালো কন্যে
তোমার চিকন কেশ।[২]

কিংবা

টুমুস টুমুস বাদ্যি বাজে,
লোকে বলে কী,
শামুকরাজা বিয়ে করে
ঝিনুকরাজার ঝি।

  1. ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ ইত্যাদি ছড়াটির ছন্দ-বিশ্লেষণ (পৃ ৬২-৬৩) দ্রষ্টব্য।
  2. সমগ্র ছড়াটি ‘লোকসাহিত্য’ গ্রন্থের ‘ছেলেভুলানো ছড়া’ নামক মূলপ্রবন্ধে সংকলিত হয়েছে। ছড়াটির আরও ‘জাদু, এতো বড়ো রঙ্গ’। উক্ত প্রবন্ধে ‘চিকন কেশ’-এর স্থলে আছে ‘মাথার কেশ’।