শিখরিণী মালিনী মন্দাক্রান্তা শার্দুলবিক্রীড়িত প্রভৃতি বড়ো বড়ো গভীরচালের ছন্দ গুরুলঘুস্বরের যথানির্দিষ্ট বিন্যাসে অসমান মাত্রাভাগের ছন্দ। বাংলায় আমরা বিষমমাত্রামূলক ছন্দ কিছু কিছু চালিয়েছি, কিন্তু বিষমমাত্রার ঘনঘন পুনরাবৃত্তির দ্বারা তারো একটা সম্মিতি রক্ষা হয়।
শিমুল রাঙা রঙে
চোখেরে দিল ভরে।
নাকটা হেসে বলে,
হার রে যাই মরে।
নাকের মতে, গুণ
কেবলি আছে ঘ্রাণে,
রূপ যে রঙ খোঁজে
নাকটা তা কি জানে।
এখানে বিষমমাত্রার পদগুলি জোড়ে জোড়ে এসে চলনের অসমানতা ঘুচিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সংস্কৃত ভাষায় বিষমমাত্রার বিস্তার আরো অনেক বড়ো। এই সংস্কৃত ছন্দের দীর্ঘহ্রস্ব স্বরকে সমান করে নিয়ে কেবলমাত্র মাত্রা মিলিয়ে ছন্দ রচনা বাংলায় দেখেছি, সে বহুকাল পূর্বে ‘স্বপ্নপ্রয়াণে’।
লজ্জা বলিল, “হবে
কি লো তবে,
কতদিন পরান রবে
অমন করি।
হইয়ে জলহীন
যথা মীন
রহিবি ওলো কতদিন
মরমে মরি”।[১]
এর প্রত্যেক ভাগে মাত্রাসংখ্যা স্বতন্ত্র।
- ↑ স্বপ্নপ্রয়াণ, দ্বিতীয় সর্গ, ১২৫। শিখরিণী ছন্দ। ‘লজ্জা’ শব্দে দুই মাত্রা গণনীয়। পৃ ১৩৫ পাদটীকা ১ দ্রষ্টব্য।