পাতা:ছন্দ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছন্দের প্রকৃতি
১৩৫

বিরহব্যথা মম নিজে নিজে
তোমারি মুরতি যে
গড়িছে অবিরত।
এ-পূজা ধায় ধবে তোমা পানে
বাজে কি কোনোখানে,
কাঁপে কি মন তব।
জান কি দিবানিশি বহুদূরে
গোপনে বাজে সুরে
বেদনা অভিনব।[১]

\

 ছন্দ সম্বন্ধে আরো কিছু বলা বাকি রইল, আর কোনো সময়ে পরে বলবার ইচ্ছা আছে।[২] উপসংহারে আজ কেবল এই কথাটি বলতে চাই যে, ছন্দের একটা দিক্ আছে যেটাকে বলা যেতে পারে কৌশল। কিন্তু তার চেয়ে আছে বড়ো জিনিস যেটাকে বলি সৌষ্ঠব। বাহাদুরি তার মধ্যে নেই, সমগ্র কাব্যসৃষ্টির কাছে ছন্দের আত্মবিস্মৃত আত্মনিবেদনে তার উদ্ভব। কাব্য পড়তে গিয়ে যদি অনুভব করি যে ছন্দ পড়ছি, তাহলে সেই প্রগল্‌ভ ছন্দকে ধিক্‌কার দেব। মস্তিষ্ক হৃৎপিণ্ড পাকস্থলী অতি আশ্চর্য যন্ত্র, সৃষ্টিকর্তা তাদের স্বাতন্ত্র্য ঢাকা দিয়েছেন। দেহ তাদেরকে ব্যবহার করে, প্রকাশ করে না। করে প্রকাশ যখন রোগে ধরে; তখন যকৃৎটা হয় প্রবল, তার কাছে মাথা হেঁট করে লাবণ্য। শরীরে স্বাস্থ্যের মতোই কবি ছন্দকে ভুলে থাকে, ছন্দ যখন তার যথার্থ আপন হয়।

 উদয়ন—১৩৪১ বৈশাখ
  1. এটির সঙ্গে ‘স্বপ্নপ্রয়াণ’এর ‘লজ্জা বলিল’ ইত্যাদি দৃষ্টান্তটির (পৃ ১৩৩) মাত্রাবিভাগগত পার্থক্য লক্ষিতব্য। সংস্কৃত-ছন্দশাস্ত্রমতে শিখরিণীর প্রতিপংক্তির দুই ভাগ; প্রথম ভাগে এগার এবং দ্বিতীয় ভাগে চোদ্দ মাত্রা (পূর্ণ বিবরণ ‘সংজ্ঞাপরিচয়’ অংশে দ্রষ্টব্য)। দ্বিজেন্দ্রনাথ প্রথম ভাগের এগার মাত্রাকে ভেঙে সাত ও চার মাত্রার দুই পর্ব এবং দ্বিতীয় ভাগে চোদ্দ মাত্রাকে ভেঙে নয় ও পাঁচ মাত্রার দুই পর্ব রচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ প্রথমে এগার মাত্রা একত্র স্থাপন করে দ্বিতীয় ভাগটিকে সাত মাত্রার দুটি পর্বে বিভক্ত করেছেন। এ-বিষয়ের বিস্তৃত আলোচনা “বাংলা কবিতায় সংস্কৃত ছন্দ” প্রবন্ধে (ভারতবর্ষ ১৩৪১ অগ্রহায়ণ পৃ ৮৫৭-৫৮) দ্রষ্টব্য।
  2. পরবর্তী প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য।