এমনি করে হতে হতে ছন্দের মধ্যে এসে পড়ে তিনের মাত্রা। যেমন—
আনহি বসত আনহি চাষ,
বলে ডাক তাহার বিনাশ।
কিংবা
আষাঢ়ে কাড়ান নামকে,
শ্রাবণে কাড়ান ধানকে,
ভাদরে কাড়ান শিষকে,
আশ্বিনে কাড়ান কিসকে।
এর অর্থ বোঝাবার দায়িত্ব নিতে পারব না।
দুইমাত্রার ছড়ার ছন্দ পরিণতরূপ নিয়েছে পয়ারে। বাঙালি বহুকাল ধরে এই ছন্দে গেয়ে এসেছে রামায়ণ মহাভারত একটানা সুরে। এই ছন্দে প্রবাহিত প্রাদেশিক পুরাণকাহিনী রঙিয়েছে বাঙালির হৃদয়কে। দারিদ্র্য ছিল তার জীবনযাত্রায়, তার ভাগ্যদেবতা ছিল অত্যাচারপরায়ণ, সে এমন নৌকোয় ভাসছিল যার হাল ছিল না তার নিজের হাতে; যখন তার আকাশ থাকত শান্ত তখন গ্রামের এঘাটে-ওঘাটে চলত তার আনাগোনা সামান্য কারবার নিয়ে; কখনো বা দিনের পর দিন দুর্যোগ লেগেই থাকত, ভাগ্যের অনিশ্চয়তায় হঠাৎ কে কোথায় পৌঁছয় তার ঠিক ছিল না, হঠাৎ নৌকোসুদ্ধ হত ভরাডুবি। এরা ছড়া বাঁধেনি নিজের কোনো স্মরণীয় ইতিহাস নিয়ে। এরা গান বাঁধেনি ব্যক্তিগত জীবনের সুখ-দুঃখ-বেদনায়। এরা নিঃসন্দেহই ভালোবেসেছে, কিন্তু নিজের জবানিতে প্রকাশ করেনি তার হাসিকান্না। দেবতার চরিতবৃত্তান্তে এরা ঢেলেছে এদের অন্তরের আবেগ; হরপার্বতীর লীলায় এরা নিজের গৃহস্থালির রূপ ফুটিয়েছে, রাধাকৃষ্ণের প্রেমের গানে এরা সেই প্রেমের কল্পনাকে মনের মধ্যে ঢেউ লাগিয়েছে যে-প্রেম সমাজবন্ধনে বন্দী নয়, যে-প্রেম শ্রেয়োবুদ্ধিবিচারের বাইরে। একমাত্র কাহিনী ছিল